Ajker Patrika

বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী ৯, জামানত হারিয়েছেন পাঁচজন 

নাজমুল হাসান সাগর ও অদ্বৈত কুমার আকাশ, বগুড়া থেকে
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪: ৫১
Thumbnail image

কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৪ সংসদীয় আসনের অনেক প্রার্থীই তাঁদের জামানত হারিয়েছেন। কয়েকটি দল মনোনীত ও স্বতন্ত্রসহ এই উপনির্বাচনে ভোটের জন্য লড়েছেন মোট ৯ জন। এর মধ্যে মশাল প্রতীক নিয়ে চৌদ্দ দল মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন (প্রাপ্ত ভোট ২০ হাজার)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) একতারা প্রতীক নিয়ে লড়ে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে।

এই উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন পাঁচজন প্রার্থী। জামানত হারানো প্রার্থীদের তালিকায় আছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৪৪৬ ভোট। জাকের পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৪ ভোট। বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির তাজ উদ্দীন মন্ডল ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৬৭ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা দালান প্রতীকে নির্বাচন করে পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯০ ভোট এবং ইলিয়াস আলী কলার ছড়ি প্রতীকে সর্বনিম্ন ৮৪৮ ভোট পেয়ে আইন অনুযায়ী জামানত হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে জামানত রাখতে হয়। আইন অনুযায়ী মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগের কম ভোট পেলে ওই প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়।’

বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে ১১২টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯ জন ভোটার ছিলেন। কিন্তু ভোট পড়েছে মাত্র ৭৮ হাজার ৫২৪টি। সেই হিসাবে ভোট কাস্ট হয়েছে শতকরা ২৩ দশমিক ৯২ ভাগ, যা মোট ভোটের তুলনায় খুবই নগণ্য। 

জামানত হারানো এসব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আজকের পত্রিকা ৷ বেশির ভাগই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। অনেকে ফোনই ধরেননি। তাঁদের মধ্যে রহস্যজনক অভিযোগের সুর তুলেছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার চেয়ে আপনাদের বেশি জানার কথা, কেন ভোট কম পেয়েছি! যে তানসেনের খবর নাই, সে ২০ হাজার ভোট পায়, বোঝেন না?’ কীভাবে তানসেন ২০ হাজার ভোট পেল, জানতে চাইলে ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। 

তবে ভোটের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ ও অল্পসংখ্যক ভোট কাস্টিং হওয়াকে নিজের জামানত হারানোর কারণ হিসেবে দেখছেন দালান প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানুষ ভোট দেয়নি, তাই ভোট কম পেয়েছি। ভোট এত কম পড়লে আমার ভোট কোথা থেকে আসবে?’

এই নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান ট্রাক প্রতীকে ১০ হাজার ৭৯১ ও কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল কুরাল প্রতীকে ১০ হাজার ৪৪২ ভোট পেয়েছেন। 

নির্বাচনে হেরে ফলাফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে উপনির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম)। গতকাল রাত ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকায় তাঁর বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে আদালতে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

সংবাদ সন্মেলন করে হিরো আলম অভিযোগ করেন, ‘ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু দেখেছি। কিন্তু ফলাফলের জায়গায় গন্ডগোল করা হয়েছে। ফলাফল পাল্টে দিয়েছে। সদরের ভোট নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। লাহেরিপাড়ায় আমার এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। তানসেনের কোনো নাম-গন্ধই ছিল না। তাকে পাশ করানো হয়েছে।’  

কিছু কিছু শিক্ষিত লোক তাকে মেনে নিতে চান না উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, ‘তারা ভাবে আমি পাশ করলে দেশের সম্মান যাবে, অনেকের সম্মান যাবে। অফিসারদের লজ্জা, যে হিরো আলমকে স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে। আমাকে জিততে দেওয়া হয়নি।’ 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত এই ভিডিও নির্মাতা আরও বলেন, ‘এসব অনিয়মের বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দিইনি। তবে ফলাফলের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। ১০টি কেন্দ্রের ভোট গণনা বাদ দিয়েই ফলাফল দিয়েছে প্রশাসন। এই কেন্দ্রগুলো কতগুলোয় ভোট পাইলাম তা জানানো হলো না আমাকে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত