Ajker Patrika

রাজশাহীতে দুদিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারানো প্রভাষক দম্পতির স্বজনেরা শোকে স্তব্ধ

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী) 
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৫১
রাজশাহীতে দুদিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারানো প্রভাষক দম্পতির স্বজনেরা শোকে স্তব্ধ

দুই দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দুই বোন মারিশা ও মাশিয়ার মৃত্যু হয়েছে। দুই শিশুর এমন হঠাৎ মৃত্যুতে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একই সঙ্গে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে চুনিয়াপাড়া গ্রাম।

একদিকে মারিশার মৃত্যুর পর মাশিয়ার কথাগুলো স্মরণ করে ডুকরে কাঁদছিলেন তাঁদের চাচা। অন্যদিকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে দাদি আনজুয়ারা বেগমের। এর মধ্যেই বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দাদা আমির আলী।

প্রতিবেশীরাও এমন অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মানতে পারছেন না। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র।

মারিশা ও মাশিয়ার বাবা মনজুর রহমান (৩৫) ও মা পলি খাতুন (৩০) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আইসোলেশনে ভর্তি আছেন। মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তাঁরা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

মারিশা ও মাশিয়ার চাচা মুনছুর রহমান বলেন, গত বুধবার মারিশা মারা যাওয়ার পর সবাই বাড়িতে এসেছিলেন। মারিশার গোসল ও দাফন কাজ চলছিল। তখনো মাশিয়া সুস্থ সবল দৌড়ে ঘুরে বেড়াল। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মাসিয়াও মারা গেল।

মারিশা ও মাসিয়ার বাড়ির সামনে নীরবে বসে ছিলেন প্রতিবেশী হারেজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এটা আজব মরা বাপু। এক সাওয়ালের লাশ মাটি দিয়ে এক দিন এক রাত পর শুনতেছি আরেক সাওয়ালও মরছে।’ এ বলেই কাঁদতে শুরু করেন হারেজ। 

শিশু মারিশা ও মাশিয়ার বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজনেরা। বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা গেল উঠানে বসা শিশুদের দাদি আনজুয়ারা বেগমকে। গত তিন দিন ধরে দুই নাতি হারানোর শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কাঁদতে কাঁদতে এখন চোখে জলও নেই। ঘরে মধ্যে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছেন দুই শিশুর দাদা আমির আলী। 

এ সময় কথা হয় মারিশা ও মাশিয়ার দাদি আনজুয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছেলে চারঘাট উপজেলায় ক্যাডেট কলেজ চাকরি করে। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে আমি ছেলের কাছে গিয়েছিলাম নাতিদের দেখতে। গত বুধবার সকালের দিকে নাতি মারিশার জ্বর আসে। বারবার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই আমার কোলেই তার মৃত্যু হয়।’ 

দুই বোনের মৃত্যুর পর প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করেছেন। ছবি: আজকের পত্রিকাআনজুয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘পরে আমরা সবাই বাড়িতে চলে আসি। তখনো ভালো ছিল বড় নাতি মাশিয়া। শুক্রবার সকাল থেকে মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। এ সময় দেরি না করে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। কিন্তু সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি নেন। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।’ 

এদিকে গতকাল শনিবার রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানিয়ে ছিলেন, দুই মেয়ে বরই খেয়েছিল। তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বরইগুলো ধুয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না। তাদের বাবা বলেছেন, গৃহকর্মী গাছতলা থেকে কুড়িয়ে এনে দিয়েছিল, ধোয়া হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাস হতে পারে। তাই নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত