Ajker Patrika

ঝুড়ি ভরা আম, সুগন্ধে ভরা মাঠ

­­­নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর সাপাহারে দুই দিনব্যাপী ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
নওগাঁর সাপাহারে দুই দিনব্যাপী ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝুড়িতে সাজানো একেক জাতের আম। কারও গায়ে সবুজের ছোঁয়া, কারওবা রঙিন-হলুদ। দর্শনার্থীরা কেউ ছবি তুলছেন, কেউ নিচ্ছেন স্বাদ। আমের গন্ধে ভরে গেছে সাপাহার পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠ। আমের বাণিজ্যিক রাজধানী নওগাঁর সাপাহারে আজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উৎসবটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, নওগাঁর আম চাষ এখন শিল্পে রূপ নিয়েছে। সারা বছর আম হয়। রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে এই শিল্প আরও প্রসারিত হবে। তিনি জানান, নওগাঁয় ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ভিএইচটি) ও প্যাকিং হাউস স্থাপনের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

মেলায় রয়েছে ৪০টি স্টল। প্রতিটি স্টলেই রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম—হিমসাগর, গোপালভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, ল্যাংড়া ইত্যাদি। শুধু ফল নয়, রয়েছে আম দিয়ে তৈরি নানা খাবার, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, শুকনো আম, আমের চাটনি, জ্যাম ও জেলি। চাষিদের জন্য রাখা হয়েছে প্রশিক্ষণ বুথও। সেখান থেকে মিলছে গ্যাপপদ্ধতিতে উৎপাদন, রপ্তানি প্রক্রিয়া ও রোগমুক্ত আম উৎপাদনের পরামর্শ।

উৎসব ঘুরে দেখা গেল, দুপুরের দিকে মাঠ ছিল কিছুটা ফাঁকা। কিন্তু বিকেলের দিকে ভিড় জমে। স্কুলশিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা, নারী দর্শনার্থী, এমনকি কয়েকজন বিদেশফেরত আমপ্রেমীও উপস্থিত ছিলেন। কলেজছাত্রী ফারজানা হোসেন বলেন, ‘প্রথমবার এমন আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। আম যে শুধু খাওয়ার বিষয় নয়, এর পেছনে বিজ্ঞান, গবেষণা আর অর্থনীতি—সবকিছু কাজ করে, সেটা আজ বুঝলাম।’

নওগাঁর সাপাহারে দুই দিনব্যাপী ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল। ছবি: আজকের পত্রিকা-২
নওগাঁর সাপাহারে দুই দিনব্যাপী ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল। ছবি: আজকের পত্রিকা-২

তরুণ আমচাষি সোহেল রানা বলেন, ‘আম রপ্তানি করতে গেলে ভিএইচটি প্ল্যান্ট আর কোয়ারেন্টিন শাখা দরকার। আমগুলো দূষণমুক্ত হলেও সনদের অভাবে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। সরকার এগুলো দ্রুত স্থাপন করলে আমচাষি যেমন লাভবান হবে, দেশও পাবে বৈদেশিক মুদ্রা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ বলেন, সাপাহারে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি আমচাষি আছেন। ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম উৎপাদিত হয়। গত বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমের লেনদেন হয়েছে। এই অঞ্চল সত্যিকারের অর্থনীতির শক্তি হয়ে উঠছে।

স্টলে ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এমন মেলা বছরে একবার নয়, প্রতি মৌসুমেই হওয়া উচিত। এখান থেকে চাষিরাও শিখবে, সাধারণ মানুষও জানবে নওগাঁর আম কত দূর যেতে পারে।’

উদ্বোধনী আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈকত ইসলাম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ, আল হেলাল ইসলামী একাডেমির অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম প্রমুখ। আয়োজকেরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে এই প্রথমবার এমন আয়োজন। ভবিষ্যতে এই উৎসবকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাঁদের মতে, নওগাঁর আম শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও স্থান পেতে পারে—যদি চাষি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁর সাপাহারে আয়োজিত এই উৎসব চাষি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। আমকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চল যে কতটা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ধারণ করে, তা এখন স্পষ্টভাবে উঠে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত