Ajker Patrika

মামলার খরচ ও নেশার টাকার জন্য তপুকে অপহরণ ও খুন: পুলিশ  

পাবনা প্রতিনিধি
Thumbnail image

ছাত্রাবাসের পাশের বাড়িতে থাকার সুবাদে পরিচয় হয় তপুর সঙ্গে। একপর্যায়ে তাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেন ছাত্রাবাসে থাকা সেই বন্ধুরাই। আগের হত্যা মামলার খরচ, ছাত্রাবাসের বকেয়া এবং মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে এ পরিকল্পনা করেন তিন বন্ধু জয়, ঈসা ও সোহেল। এরপর তাঁকে হত্যার পর মরদেহ ট্রাংকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করেন তাঁরা। 

পাবনার ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর কিশোর তপু হত্যাকাণ্ড নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জয় (২০) এবং ঈশ্বরদী পৌর সদরের মশুরিয়াপাড়া এলাকার ঈসা খালাশি (১৯)। এ ঘটনায় সোহেল নামের আরেক আসামি পলাতক রয়েছেন। 

নিহত তপু হোসেন মশুরিয়াপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। সে শ্রমিকের কাজ করত। 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুন দুপুরে ঈশ্বরদীর মশুড়িয়াপাড়ার কিশোর তপু (১৪) নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর অজ্ঞাত অপহরণকারী কিশোর তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর বাবাকে ফোন করে তপুকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। 

 ৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তপুর খোঁজ না পাওয়ায় তপুর মা মজিরন বেগম বাদী হয়ে পরদিন ১৬ জুন ঈশ্বরদী থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। 

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মূল আসামিদের শনাক্ত করা হলেও তপুর সন্ধান পাচ্ছিল না পুলিশ। নিখোঁজের আট দিন পর গত ২২ জুন মশুড়িয়াপাড়াস্থ অরন্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় একটি টিনের বাক্স থেকে তপুর অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ঢাকায় পালানোর সময় পাবনা শহরের ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রধান অভিযুক্ত জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পুলিশকে জানিয়েছে তারা ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে অরন্যা ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকত। ভুক্তভোগী তপুর বাড়ি ছাত্রাবাসের পাশেই হওয়ায় একসঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম, আড্ডা দিত ও ধূমপান করত। জয় ইতিপূর্বে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় মামলার খরচ, ছাত্রাবাসে খরচ এবং মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সোহেল ও ঈসার সঙ্গে অপহরণের পরিকল্পনা করে। 

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কৌশলে তপুকে ছাত্রাবাসে ডেকে এনে জিম্মি করে। তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে তারা চাকু দিয়ে হত্যা করে এবং বেল্ট দিয়ে তার হাত বেঁধে একটি বাক্সে ভরে রাখে। পরবর্তীতে আসামি জয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার বাবা কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। 

গত ২২ জুন দুপুরে অরন্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় সন্দেহভাজন আসামি জয়ের কক্ষ থেকে উৎকট গন্ধ আসতে থাকে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় নিখোঁজ তপুর মা-বাবাকে খবর দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেসের মালিকসহ আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে কক্ষটির তালা ভেঙে টিনের বাক্সের ভেতর থেকে অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। নিখোঁজ তপুর বাবা-মা লাশটি তাদের ছেলে তপুর বলে শনাক্ত করেন। 

পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম, ঈশ্বরদী থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত