Ajker Patrika

গরু ব্যাপারীকে হত্যার পর ১৪ লাখ টাকা লুট, গ্রেপ্তার ৯

নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ১৮: ৪৮
গরু ব্যাপারীকে হত্যার পর ১৪ লাখ টাকা লুট, গ্রেপ্তার ৯

গরু বিক্রির ১৪ লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে শহিদুল ইসলাম মিয়া (৪৫) নামে বগুড়ার এক গরুর ব্যাপারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত কয়েক দিনে নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ রোববার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের মো. ইনদাদুল (২৭), বড়াইগ্রাম উপজেলার মানিকপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আরিফ (২৫), মিঠুন (২৮), শাহ আলম (২৪), রুবেল (৩২), সোহাগ (২৫), সুজন (৩০), রেজাউল (৩৫) ও রসুল (৩২)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক, মোবাইল ফোন ও ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, শহিদুল গরু বিক্রির টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে চলন্ত ট্রাকে পিটিয়ে আহত করে দীর্ঘ সময় মুখে স্কচটেপ আটকে রাখায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহত শহিদুলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে শহিদুলের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা এবং আহত অপর চার ব্যাপারীকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। 

পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, রাজধানীর আফতাবনগর হাটে ১৫টি গরু বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাত ১১টার দিকে বগুড়ার উদ্দেশে একটি পশুফেরত ট্রাকে রওনা দেন শহিদুলসহ পাঁচ ব্যবসায়ী। দীর্ঘ সময় ট্রাকটি গাজীপুরের চন্দ্রায় যানজটে আটকে থাকার পর এলাকা পার হলে ট্রাকে থাকা ছদ্মবেশী ৯ ডাকাত হঠাৎ তাঁদের পিটিয়ে হাত-পা, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলে। মারধরের একপর্যায়ে শহিদুল সেখানেই মারা যান। এ সময় তাঁদের সব টাকাপয়সা কেড়ে নেয় ডাকাতেরা। শহিদুলের মৃতদেহ ফেলার মতো উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় বুধবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে রাতে শহিদুলসহ পাঁচজনকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আগ্রাণ এলাকায় একটি পেট্রলপাম্পের পাশে ফেলে দেয় ডাকাতেরা। 

পরে আহত ব্যপারীরা পেট্রলপাম্পে এসে বিষয়টি জানালে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ নিহত ////শহিদুলের মরদেহ উদ্ধার করে অন্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে আহতদের একজন মো. নুর আলম বাদী হয়ে হত্যা ও লুণ্ঠনের মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ডাকাতেরা ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য বড়াইগ্রামের রশিদ অটো রাইস মিলের একটি ট্রাক ভাড়া করে। ডাকাতদের একজন সোহাগ (২৬) ট্রাকের চালক। পরিকল্পিতভাবে গত ২৭ জুন ডাকাতেরা আফতাবনগর হাটের আশপাশে অবস্থান নেয় ছদ্মবেশী ডাকাতেরা। এ সময় তারা বগুড়ার পাঁচ ব্যাপারীকে টার্গেট করে মাথাপিছু ৫০০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে রংপুর পর্যন্ত নিতে প্রস্তাব দেয়। ব্যাপারীরা বগুড়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ট্রাকে উঠে ডাকাতির শিকার হন। 

এসপি সাইফুর রহমান বলেন, ১৪ লাখ টাকার লুটের পরই চুক্তি অনুসারে ভাগাভাগি করে নেয় ডাকাতেরা। এ টাকা তৎক্ষণাৎ কেউ কেউ খরচও করে। তবে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাসংলগ্ন বড়াইগ্রামের গোপালপুর মধ্যপাড়া থেকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি রশিদ অটো রাইস মিল কীভাবে ভাড়া দিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

এসপি বলেন, গরু বিক্রির টাকা ছিনিয়ে ব্যাপারীকে হত্যার ঘটনাটি পুলিশ মহাপরিদর্শককে নাড়া দেন। তিনি শুরু থেকেই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং ডাকাতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মানবিক দিক বিবেচনা করে নিহত শহিদুল ইসলামের পরিবারকে এক লাখ টাকা ও অপর চারজনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দিয়েছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এ টি এম মাইনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শরীফ আল রাজীব, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত