Ajker Patrika

বকেয়া পাওনা ৭৫০ কোটি টাকা, বিপদে পাউবোর অর্ধশত ঠিকাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ২১
বকেয়া পাওনা ৭৫০ কোটি টাকা, বিপদে পাউবোর অর্ধশত ঠিকাদার

তিন বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর বাগডাঙ্গা এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষায় ব্লক বসানোর কাজ করেছেন ঠিকাদার খন্দকার হাসান কবির। পদ্মার ভাঙন থেকে এলাকাটি সুরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বিল না পেয়ে বিপদে পড়েছেন ঠিকাদার হাসান কবির। ব্যাংকের ঋণে ফেঁসে তিনি এখন বড় বিপদে। পাউবোর কাছ থেকে বিল পাচ্ছেন না, তাই ব্যাংকঋণও শোধ করতে পারছেন না।

রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাজ করে এ রকম অর্ধশত ঠিকাদার বিপদে পড়েছেন। প্রায় তিন বছর ধরে তাঁরা বিল পাচ্ছেন না। বেশি সমস্যায় পড়েছেন আপৎকালীন জরুরিভিত্তিতে কাজ করা ঠিকাদারেরা। বিল না পেয়ে তাঁরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই দ্রুত বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে ঠিকাদারেরা আজ বুধবার রাজশাহীতে পাউবোর বিভাগীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন।

মেসার্স ন্যাচারাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খন্দকার হাসান কবির বলেন, ‘পাউবোর কাছে আমার দুই কোটি চার লাখ টাকা পাওনা। নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্লক বসানোর কাজ করেছি। এই কাজ করতে গিয়ে ব্যাংকে ঋণ হয়ে গেছে। এখন টাকা পাচ্ছি না। টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।’

পাউবোর ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, বিভাগের আট জেলায় প্রকল্প ও আপৎকালীন কাজ মিলিয়ে অর্ধশত ঠিকাদারের ৭৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে পাউবোর কাছে। গচ্ছিত সব টাকা এবং ঋণ নিয়ে কাজ শেষ করার কারণে এখন ঠিকাদারদের হাতে কোনো টাকা নেই। তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকের বাচ্চার জন্য দুধ কেনার টাকা পর্যন্ত নেই।

ঠিকাদার কে এম জোবায়েদ বলেন, তিনি পাউবোর কাছে পাবেন প্রায় চার কোটি টাকা। টাকা না পেয়ে ব্যাংকের ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন। তাঁর দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট হয়েছে। পাউবো দিনের পর দিন বিল আটকে রাখার কারণে তাঁর ব্যক্তিগত সুনাম নষ্ট হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে পাউবো ঠিকাদার কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে আজ বুধবার সকালে রাজশাহীতে পাউবো কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তাতে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা তপন সেন। সভাপতিত্ব করেন বজলুর রহমান। বক্তব্য দেন সংগঠনের আহ্বায়ক জামাত খান ও রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম নবী রনী।

জামাত খান বলেন, ‘আপৎকালীন নির্মাণসামগ্রীর দাম যা-ই হোক না কেন, তা না দেখে মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষায় পাউবোর ঠিকাদারেরা কাজ করে থাকেন। কিন্তু কাজ করে তাঁরাই বিপদে পড়ে গেছেন। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অর্ধশত ঠিকাদারের ৭৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। দ্রুত এই টাকা পরিশোধ করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

মানববন্ধন শেষে পাউবোর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম ও রাজশাহী পৌর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুরের কাছে টাকা পরিশোধের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের টাকা বরাদ্দ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাউবো থেকে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চলেও গেছে। নির্বাচনের জন্য সবাই ব্যস্ত থাকায় টাকা পেতে একটু দেরি হয়েছে। এখন দ্রুতই টাকা পেয়ে যাব বলে আশা করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারব।’

অঙ্কুর আরও বলেন, আপৎকালীন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পাওনা টাকার পরিমাণ কত তা কাগজপত্র দেখে বলতে পারবেন। এই টাকাও দ্রুত পরিশোধের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত