Ajker Patrika

বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ: খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন ৭ পরিবারের

­­শাহীন রহমান, পাবনা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১৯: ২৪
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নৈশপ্রহরী হত্যায় জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। খেয়ে না-খেয়ে কাটছে তাদের দিন। এরই মধ্যে হত্যায় জড়িত দুই আসামি ও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, শুধু সন্দেহের জেরে সাতটি পরিবারকে নিঃস্ব করার দায় কে নেবে?

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরগুলো পড়ে রয়েছে ভাঙচুর অবস্থায়। মাঝে কিছু সিমেন্ট ও বাঁশের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে যাওয়ার ক্ষতচিহ্ন ভাঙা ঘরের বারান্দাজুড়ে। ধ্বংসস্তূপ দেখে মনে হবে যেন বসতবাড়িগুলোর ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের ওপর চালানো হয়েছে এমন বর্বরতা। সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এমন চিত্র পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ১০ জুন সকাল ৯টা। সকালের রান্না করে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সবাই। এমন সময় স্থানীয় ১০-১২ জন বিভিন্ন বয়সী লোক এসে কোনো কথা না বলে অতর্কিত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। মারধর করে নারীদের বের করে দিয়ে একে একে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। শেষে আগুন দিয়ে চলে যায়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। ততক্ষণে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

ভুক্তভোগী পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৯ জুন রাতে চণ্ডীপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ওসমান গণি মোল্লাকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি কাজীপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিহত ওসমান গণি উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। ওই রাতে বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের মৃত বদরুজ্জামানের ছেলে শাহাদত হোসেন ভালোবাসার সম্পর্কে এক মেয়েকে নিয়ে ওসমান গণি মোল্লার কাছে গিয়ে তাঁদের বিয়ে পড়াতে বলেন। কিন্তু শাহাদতের স্ত্রী-সন্তান থাকায় বিয়ে পড়াতে রাজি হননি তিনি। পরে ওই রাতেই খুন হন ওসমান গণি।

১০ জুন সকালে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শাহাদতকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় গ্রামপ্রধানেরা। এরপর মসজিদে মাইকিং করে তাঁর বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর শাহাদতের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে উত্তেজিত এলাকাবাসী। শাহাদতসহ তাঁর ছয় ভাই এবং এক বোনের মোট সাতটি পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে ঘরে থাকা সব আসবাব, টাকা, চাল, ফসল, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু লুট করে নেওয়া হয়।

ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আব্দুল বারিক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ১০ জুন ভাঙ্গুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ১১ জুন ওসমান গণি হত্যায় জড়িত মূল দুই অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয় যে মাদকের টাকার জন্য তারা বৃদ্ধকে খুন করেছে। তারা হলো বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের জেলহক প্রামাণিকের ছেলে হাবিব (১৪) ও চণ্ডীপুর গ্রামের আসমত আলীর ছেলে আহমদ উল্লাহ (১৫)। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের মৃত বদিউজ্জামান সরকারের ছেলে রবিউল করিম, আব্দুর রহিম, নুরুল ইসলাম, আব্দুস সোবাহান, সাদ্দাম হোসেন, শাহাদত হোসেন ও লাইলী খাতুন। তাঁদের মধ্যে নুরুল, সোবাহান ও সাদ্দাম মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে বড় ভাই রবিউল করিম বাদী হয়ে ১৮ জুন মামলা করেন। মামলায় ১৩ জনের নামে ও ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার পর পুলিশ ১৯ জুন তিন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। তাঁরা হলেন চণ্ডীপুর গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে সাইদুর রহমান, বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলামের ছেলে শাহীন হোসেন।

ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর আর আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আগুনে পুড়ে গেছে ঘরের সবকিছু। জ্বলছে না চুলা। গতকাল রোববার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নৈশপ্রহরী ওসমান গণি হত্যার মূল দুই আসামি হাবিব ও আহমদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মাদকের টাকার জন্য মূলত ওসমান গণিকে খুন করেছে বলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। আর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মামলায় সাইদুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, ‘হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার, এক বান্ডিল করে টিন, ৬ হাজার করে টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থবছর যেহেতু শেষ, তাই সামনের অর্থবছরে আবারও তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত