Ajker Patrika

সুইস ব্যাংক থেকে পাচারকৃত টাকা এনে বিনাসুদে ঋণের প্রলোভন, ফের তৎপর প্রতারক সংগঠন

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া) 
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ২৩: ২১
Thumbnail image

বগুড়ার শেরপুরে দরিদ্র মানুষের জন্য রবিনহুড হয়ে হঠাৎ আগমন হয়েছে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের। এলাকার দরিদ্র মানুষকে তারা বলছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যে টাকাগুলো সুইস ব্যাংক গেছে তা তারা ফেরত এনে বিনাসুদে ঋণ দেবে। ঋণ নেওয়ার জন্য শেরপুরের দরিদ্র মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই সংগঠনটি পৌর শহরের একটি মার্কেটের ছাদে বসে ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুকদের তথ্য ফরম পূরণ করেছে। এখন গ্রামে গ্রামে প্রবেশ করেছে। 

‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি নিয়ে এর আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন প্রতারণা ফাঁদ পাতার ঘটনা আছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এবার তারা বগুড়ার শেরপুরে মিশনে নেমেছে। যেখানে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তারা ফেরত এনে বিনা জামানত ও বিনাসুদে ঋণ দেবে। 

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মার্কেটের ছাদে সমবেত হয়েছেন শত শত নারী-পুরুষ। ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই দেখা মেলে রুবেল নামে এক যুবকের। তিনি ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুকদের তথ্য ফরম পূরণে ব্যস্ত। তিনি জানান উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগমের নির্দেশেই তথ্য ফরম পূরণ করা হচ্ছে। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না। 

কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া গ্রামের শাহানাজ বেগম বলেন, লোক মুখে শুনে আমি এখানে এসেছি। অন্য সবার মতো আমিও আবেদন করেছি। তবে টাকা পাব কি না জানি না। 

উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগম বলেন, ‘উপজেলার হাটগাড়ি গ্রামের জনৈক আবদুর রশিদের সঙ্গে গাইবান্ধার শেখ ফরিদ নামের একজনের পরিচয় হয়। শেখ ফরিদ “অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ” গাইবান্ধা জেলার সংগঠক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। রশিদ তাঁর কাছ থেকে একটি ফরম এনে শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে ঋণ বিতরণের কথা বলে তা বিতরণ শুরু করে। আমি তাকে সহযোগিতা করছি মাত্র। প্রথম ধাপে শুধু আগ্রহীদের নাম, বয়স, পেশা, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষর সংবলিত একটি ফরম পূরণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ঋণ অনুমোদন হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে।’

মির্জাপুরের ভাদরা গ্রামের শাজাহান আলী বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি আবেদন করলে বিনা সুদে এক লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। তাই আবেদন করেছি। তবে এ জন্য আমার কাছ থেকে এখনো কোনো টাকা দাবি করা হয়নি।’ 

একটি মার্কেটের ছাদে বসে ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুকদের তথ্য ফরম পূরণ করেছে সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা তবে এভাবে মিথ্যা আশ্বাসে অর্থ হাতিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, ঋণ প্রত্যাশীরা প্রায় সবাই গ্রামের সহজ সরল মানুষ। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হবে। 

ঘটনা স্থলে উপস্থিত জাকির হোসেন নামে এক যুবক বলেন,  এই প্রতিষ্ঠানটি দেশর বিভিন্ন স্থানে বিনা সুদে ঋণ প্রদানের নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ সংক্রান্ত সংবাদ অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মনে হচ্ছে এখানেও তার ব্যতিক্রম হবে না। ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে ফরম পূরণের জন্য ২০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া শুরু হয়েছে। 

এ বিষয়ে আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি দ্রুত সরে পড়েন। তাঁর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে জানা যায়, গাইবান্ধার শেখ ফরিদ নামে এক ব্যক্তি তাকে একটি ফরম দিয়েছেন। তারা বিদেশের পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত এনে গ্রামের গরিব মানুষদের বিনা সুদে ঋণ দেবেন। এ জন্য তিনি শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে প্রচার করে আবেদন গ্রহণ করছেন। এগুলো ঢাকায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। 

আবেদন ফরমের তথ্য অনুযায়ী ‘অহিংস অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ এই সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। এর কেন্দ্রীয় সংগঠক আবুল বাশারের সঙ্গে মুঠোফোনের যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদেশ থেকে (সুইস ব্যাংক) পাচারকৃত টাকা ফেরত এনে দরিদ্রদের মাঝে বিনা সুদে বিতরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথাটি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গাইবান্ধায় আমাদের কার্যক্রম থাকলেও বগুড়ার শেরপুরে নেই। সেখানে হয়তো স্বেচ্ছায় আমাদের পক্ষে কাজ করছেন। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা বলেন, প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি অবগত নই। তারা আমাকে অবহিত করেননি। এ বিষয়ে থানা-পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত