Ajker Patrika

ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর পূর্তি

‘পদ্মার পানি আমাদের অধিকার, এটি ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ২১: ০৩
ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দয়া হিসেবে ভারতের কাছ থেকে পদ্মার পানি চাওয়া হয় না, এটি ভাটির দেশ বাংলাদেশের অধিকার। ভারত এত দিন ধরে সেই অধিকার থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। এখন সময় এসেছে, ভারতের কাছ থেকে এই অধিকার আদায় করে নেওয়ার।’ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবসের ৪৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজশাহীতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন কমিটি আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

সভায় তিনি বলেন, ‘আমরা কারও দয়া চাচ্ছি না। ন্যায্য অধিকার চাচ্ছি। এটা আমাদের দিতে হবে। এত বছর ধরে ভারত আমাদের বঞ্চিত করেছে। তাদের বিচার হতে হবে।’

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ। তিনি তাঁর প্রবন্ধে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। বলেন, আগামী বছর ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি শেষ হচ্ছে। নতুন চুক্তি নবায়নের সময় গ্যারান্টি ক্লজ, যা শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করে সেটা আবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফারাক্কার সমস্যাকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তার সমাধানে রাজনৈতিক চাপ দিতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। সমস্যার সমাধানে ঐক্যের বিকল্প নেই।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা আমাদের অভিশাপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বার্তা ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে নদী বিশেষজ্ঞ পাঁচজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে নদী আইন নিয়ে একটা বিভাগ খোলা উচিত। আমাদের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা খুব প্রয়োজন। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব নিরূপণ করাও জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে ভারতের তাঁবেদারি করে ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এখন অন্যান্য দলও ভারতকে তুষ্ট করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করতে হবে। এ জন্য আমাদের ছাত্র-জনতাকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ভারত সব সময় গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রকে একই অববাহিকায় চিন্তা করে সমস্যা সমাধানের কথা বলে। এটি হলে হবে না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে ফারাক্কা বাঁধ অপসারণ করতে হবে। শুধু গঙ্গার পানি চাইলে হবে না। মূল দাবি হতে হবে বাঁধ অপসারণ।’

রাজশাহী কলেজের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী কলেজের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘ভারত প্রকৃতির রহমতের বিরুদ্ধে এই বাঁধ নির্মাণ করেছে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি ৪৯ বছর আগেই এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদেরও দাঁড়াতে হবে। বাঁধটাই ধ্বংস করতে হবে। ভারতেও এ আন্দোলন আছে। আমাদের কাছে শেষবারের মতো চরম আন্দোলনের সুযোগ এসেছে এই বাঁধ অপসারণের জন্য।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি জানান, আগের সরকারের নানামুখী বাঁধা উপেক্ষা করে ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা দিবসটি উদ্‌যাপন করছেন। এ আন্দোলনে যুবসমাজ সম্পৃক্ত হয়েছে। তিনি সবাইকে মওলানা ভাসানীকে আরও বেশি করে জানার আহ্বান জানান। বলেন, ‘বিগত সরকার সামনে একজনকে দাঁড় করিয়ে আর কাউকে জানতে দেয়নি। আমি দাবি করব, পাঠ্যপুস্তকে যেন মওলানা ভাসানীকে নিয়েই একটা অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সভায় আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাশেম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সংগঠক ত্বা-সিন খান। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন লেখক ফজলুল হক তুহিন ও সাংবাদিক সাদিকুল ইসলাম স্বপন।

আলোচনা সভার আগে রাজশাহী কলেজের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এলে রাজশাহী কলেজ বিএনসিসির পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত