Ajker Patrika

বগুড়ার শেরপুর

৮ ইটভাটার একটির লাইসেন্স নেই, নবায়ন ছাড়াই চলছে বাকি ৭টি

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া)
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪১
Thumbnail image
বগুড়ার শেরপুরে চালু রয়েছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। খানপুর ইউনিয়নের শুভগাছা এলাকায় এম. কে ব্রিকসের ভাটায় ইট পোড়ানো চলছে। ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশের ছাড়পত্র ও নবায়নকৃত লাইসেন্স ছাড়াই বগুড়ার শেরপুরে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ভাটা কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষিজমি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় ১৫টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি বর্তমানে চালু। এগুলোর মধ্যে ৭ টির ছাড়পত্র নিয়েছিল। যা পরবর্তীকালে নবায়ন করা হয়নি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইটভাটাগুলোতে মাটি সংগ্রহের জন্য খনন করা হচ্ছে স্থানীয় কৃষিজমি ও পুকুর। একটি ইট তৈরিতে গড়ে প্রায় তিন কেজি মাটি প্রয়োজন হয়। এসব মাটি উত্তোলনের ফলে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে স্থানীয় পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে শেরপুরের কোনো ইটভাটা এই আইন মানছে না। মালিকদের দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বগুড়া জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে ইটভাটা রয়েছে মোট ১৫টি। সেগুলো হলো—মেসার্স রহিম রাকিব ব্রিকস, মেসার্স নিউ হিমু ব্রিকস, মেসার্স রিহাদ ব্রিকস (আর এইচ বি), মেসার্স এল এস বি ব্রিকস, মেসার্স এস টি বি ব্রিকস, মেসার্স আর কে বি ব্রিকস, মেসার্স শেখ ব্রিকস/নাফিস ব্রিকস, মেসার্স হাইটেক ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, মেসার্স বাংলা ব্রিকস, মেসার্স এম কে বি ব্রিকস, মেসার্স হটিয়ার পাড়া ব্রিকস, মেসার্স আসিফ ব্রিকস, মেসার্স এ এস ব্রিকস ও এম আর বি ব্রিকস।

এগুলোর মধ্যে মেসার্স নিউ হিমু ব্রিকস, মেসার্স আর কে বি ব্রিকস, মেসার্স শেখ ব্রিকস/নাফিস ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, মেসার্স আসিফ ব্রিকস, মেসার্স এ এস ব্রিকস ও এম আর বি ব্রিকস—এই ৭টি ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স বাংলা ব্রিকস তাদের ভাটায় এফ এন ব্রিকসকে ভাড়া দিয়েছে।

এসব ভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৬-২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হয়েছে। এখনো সেগুলো নবায়ন করা হয়নি। অন্যদিকে সরকার থেকে নতুন করে লাইসেন্স বা ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ থাকায় কিছু ভাটা লাইসেন্স পাচ্ছে না।

স্থানীয়রা বলছে, ইট পোড়ানোর ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় ঘরবাড়ি, বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাশি-শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।

ভবানীপুর ইউনিয়নের গড়ই গ্রামের হামিদুর রহমান বলেন, ‘এই ইউনিয়নে তিনটি ইটের ভাটা চালু আছে। অন্যান্য এলাকায় প্রতি বিঘায় আট মণ করে সরিষা পাওয়া গেলেও আমাদের এলাকায় পাঁচ মণের বেশি হয় না। এ ছাড়া কলা, আম, ডাবসহ বিভিন্ন গাছে ফল ধরে না। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না।’

পরিবেশের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন না থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঘোগা বটতলা এলাকার এফ এন ব্রিকসের মালিক সেলিম রেজা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের পরিবেশের ছাড়পত্র ও ডিসির অনুমোদন নেই। ১৭ সালের পর লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে জন্য চেষ্টা করেও ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।’

সেলিম রেজা আরও বলেন, ‘এরপরও বিএসটিআই ও কলকারখানার লাইসেন্স নবায়ন, ভ্যাট, ট্যাক্স সব দিতে হয়। তা ছাড়া আমার এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। এরপরও আমাদের বৈধতা নেই।’

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ইটভাটাগুলোর কারণে প্রতিবছর কী পরিমাণে আবাদি জমি, পুকুর বা জলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে এই ইটভাটাগুলো প্রতিবছর প্রায় ৫৪ হেক্টর আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে। এ ছাড়া ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া কৃষি ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার।’

‘ম্যানেজ’ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা আশীক খান। তিনি বলেন, ‘শেরপুরের ইটভাটাগুলোর যথাযথ অনুমোদন আছে কি না জানা নেই। তবে তাদের বিষয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত