Ajker Patrika

বেশি ভাড়া নেওয়ায় ঘাটের ইজারাদার বিতাড়িত, টোলঘরে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ২২
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন খেয়াঘাটে বিক্ষুব্ধ জনতার অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন খেয়াঘাটে বিক্ষুব্ধ জনতার অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। অভিযোগ রয়েছে, চরের খেয়াঘাট থেকে নৌকা পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। ঘাটের ইজারাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

এই অবস্থায় আজ শনিবার চরবাসী একত্র হয়ে ইজারাদারকে বিতাড়িত করেছেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে টোল আদায়ের ঘর। চরবাসীর দাবি, খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার নিয়মই এখন বাতিল করতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর যিনি ঘাট ইজারা নেন, তিনি নিজের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করেন। কোনো নির্দিষ্ট চার্ট বা সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। প্রতিবাদ করলে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

জেলা পরিষদ এই ঘাট ইজারা দেয়। শর্ত রয়েছে, ইজারাদার জনপ্রতি পাঁচ টাকায় নিজ দায়িত্বে মানুষকে পদ্মা নদী পার করে দেবেন। কিন্তু কোনো দিনই এই শর্ত মানা হয়নি। ইজারাদার ঘাটের জন্য আলাদা টোল নেন। আবার সেখান থেকে নৌকা চালানো মাঝিদের দিতে হয় আলাদা ভাড়া। ফলে নদী পার হতে গুনতে হয় কমপক্ষে ৩০ টাকা। মালপত্র থাকলে আদায় করা হয় আরও বেশি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চরবাসী এর প্রতিবাদ করে আসছেন। এ নিয়ে ইজারাদারের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধ মেটাতে ও যৌক্তিক টোল নির্ধারণে গতকাল শুক্রবার জেলা পরিষদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুলিশ নিয়ে খেয়াঘাটে যান। তাঁরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। নতুন ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে উভয় পক্ষকে আশ্বস্ত করা হয়। এর মধ্যে আজ বিতাড়িত করা হলো ইজারাদারকে।

চরের পরিস্থিতি আজ সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কয়েক শ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘাটে যান। তাঁদের অভিযোগ, সকালে ইজারাদারের সশস্ত্র লোকজন ঘাট বন্ধ করে মাঝিদের নৌকা চলাচল বাতিল করতে বাধ্য করেন। হুমকি দেন যে নৌকা চালালে নদীতে কেটে ফেলে দেবেন। আতঙ্কে মাঝিরা নৌকা চালানো বন্ধ করে দেন। এতে চরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কয়েক শ মানুষ ঘাট এলাকায় অবস্থান নেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন খেয়াঘাটে বিক্ষুব্ধ জনতার অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন খেয়াঘাটে বিক্ষুব্ধ জনতার অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নিশান বলেন, ‘জরুরি কাজে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এসে দেখি ঘাট বন্ধ। যাঁরা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাঁদের অস্ত্রের মুখে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয়, পার হলে মেরে ফেলা হবে।’

চরবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারেরা ইজারাদারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান না। তাঁরা নীরব সমর্থন দিয়ে থাকেন। বারবার জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চরের বাসিন্দা মো. একরাম বলেন, ‘আমরা গরিব, গলার জোর নেই, টাকা নেই। আমাদের কথা কেউ শোনে না। ওদের টাকা আছে, পেশিশক্তি আছে, তাই প্রশাসন চুপ। আর সহ্য করা যাবে না। এবার যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, আমরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার হামিদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। স্থানীয় লাইনম্যানদের সঙ্গে কিছু তর্কবিতর্ক হয়েছিল। সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি।’

যোগাযোগ করা হলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি নিজে গতকাল গিয়েছিলাম। উভয় পক্ষের জন্য যৌক্তিক টোল নির্ধারণ করা হবে বলেছিলাম। আজ নৌকা নাকি বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন টোল আদায়ের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চরবাসীর এখন এক দাবি—এখানে আর ইজারাদারের মাধ্যমে যেন নদী পারাপারে টোল আদায় করা না হয়। সেই সিদ্ধান্ত তো আমরা দিতে পারি না। এটা শুধু মন্ত্রণালয় পারে। আমরা মন্ত্রণালয়ে জানাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত