Ajker Patrika

বেড়ার কয়েকটি নদীর বালু

অবৈধভাবে উত্তোলন-বিক্রি

  • হুরাসাগর, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ
  • অতিরিক্ত বালু তোলায় নদীর তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাড় ভাঙছে বিভিন্ন এলাকায়
  • ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত দিন কাটাচ্ছে নদীপারের বাসিন্দারা
পাবনা প্রতিনিধি
হুরাসাগর নদী থেকে উত্তোলন করে কৃষিজমিতে স্তূপ করে রাখা বালু ট্রাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার পায়নাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
হুরাসাগর নদী থেকে উত্তোলন করে কৃষিজমিতে স্তূপ করে রাখা বালু ট্রাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার পায়নাঘাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদীতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে নীতিমালা উপেক্ষা করে অবাধে বালু বিক্রি চলছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাঙ্গালী-করতোয়া, ফুলজোর-হুরাসাগর নদীর সিস্টেম ড্রেজিং বা পুনঃখননসহ তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় চলছে নদী খননকাজ। খনন করা বালু-মাটি ডাইকে রেখে জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা। কিন্তু মানা হচ্ছে না সে নীতিমালা।

সম্প্রতি সরেজমিনে বেড়া উপজেলার বৃশালিখা ঘাট, ডাকবাংলো ঘাট, পায়না ঘাট ও মোহনগঞ্জ ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিয়ম না মেনে অপেক্ষাকৃত ছোট ড্রেজার দিয়ে চলছে নদী খনন। খনন করা বালু-মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে নদীপাড়ে কৃষিজমিতে। আবার চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ নদী ড্রেজিং করে বালু তোলার কথা, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণে বালু তোলা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাতের বেলায়ও চলছে অবাধে বালু তোলার কাজ।

অন্যদিকে আবার নিলাম ছাড়াই প্রকাশ্যে খনন করা বালু-মাটি বিক্রি করছেন ঠিকাদার। সরেজমিনে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। প্রতি ট্রাক বালু-মাটি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।

এদিকে জানা গেছে, হুরাসাগর ছাড়া পদ্মা এবং যমুনা নদীতে থেকেও প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। বর্তমানে বিএনপির কিছু নেতা এ কাজে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত বালু তোলায় নদীর তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীর বিভিন্ন এলাকায়। ভাঙন-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপারের বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাকবাংলো ঘাটে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন বেড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহান খাঁ। বৃশালিকা ঘাটে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন আবু সালেক ও টুটুল নামের দুই ব্যক্তি। অধীননগর পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন সাঁথিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব লিখন ও বেড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সদস্য মোশারফ। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অবাধে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে বেড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন জাহান খাঁ বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। একটি পক্ষ মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’ অভিযুক্ত বাকিদের ফোনে পাওয়া যায়নি।

খননকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএমএলবি জেভির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর শেখ আশরাফুল বারী বলেন, ‘বাংলা ড্রেজার দিয়ে কেটে যারা বালু বিক্রি করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, আমরা নিয়ম মেনেই কাটছি। যারা এভাবে কেটে বিক্রি করছে তারা অবৈধ।’

বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউর রহমান বলেন, ‘এখানে পুলিশের কিছু করণীয় নেই। আমাদের ওপরে প্রশাসন রয়েছে। তাঁদের কাজ। তাঁরা যখন অভিযান চালাবেন, তখন পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তখন ফোর্স দেই।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেড়া উপজেলায় কোনো বালুমহাল নাই। তবে হুরাসাগর নদীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ড্রেজিং প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং বিআইডব্লিওটিএ কর্তৃক নৌপথ সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজিং করে।’ তিনি বলের, ‘ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ ছাড়া কোথাও মাটি কাটা বা অবৈধ বালু উত্তোলনের তথ্য পেলে নৌপুলিশ-থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে এবং নিয়মিত মামলা দায়ের হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ কাজের সঙ্গে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জড়িত নয়। বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড জড়িত।

সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা কিছু বলতে পারব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত