Ajker Patrika

শিমুল-রমজানের পাল্টাপাল্টি শোডাউনে উত্তপ্ত নাটোর

নাটোর প্রতিনিধি
শিমুল-রমজানের পাল্টাপাল্টি শোডাউনে উত্তপ্ত নাটোর

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। 

কানাডায় দুই মাস পরিবারের সঙ্গে থেকে নাটোরে ফিরেছেন নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। শিমুলের নাটোরে আগমন ঘিরে সক্রিয় হয়েছেন তাঁর অনুসারীরা। কয়েক হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করে শিমুলকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শোডাউন করেছে সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের অনুসারীদের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ। 

কানাডা ফেরত সাংসদ শিমুলের শোডাউনকে অপরাজনীতি হিসেবে দেখছেন শরিফুল ইসলামের অনুসারীরা। এ কারণে সাধারণ সম্পাদক পদের মতো সংসদ থেকেও শিমুল ছিটকে পড়বেন বলে মন্তব্য করেছেন শরিফুল ইসলাম রমজান। 

গত ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদ হারিয়ে কানাডার টরন্টোতে স্ত্রী-সন্তানদের কাছে চলে যান সাংসদ শিমুল। নেতা দেশে না থাকায় কর্মীরা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করেন। এই সুযোগে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দখলে নেন রমজান অনুসারীরা। এই অবস্থায় গত ৬ মে দেশে ফেরেন সাংসদ শিমুল। 

রোববার নাটোর ফিরলে এমপি শিমুলকে সংবর্ধনা দেন তাঁর অনুসারীরা। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে নাটোর আসেন তিনি। বনপাড়া বাইপাস থেকে নাটোর শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি পথসভা করে বক্তব্য দেন। জেলায় দলের বর্তমান নেতৃত্বের ব্যাপারে কোনো কথা না বললেও সম্প্রতি নাটোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সরব উপস্থিতি ও তাঁকে রাজনীতি করতে সুযোগ দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে শিমুল বলেন, তিনি যতক্ষণ সংসদ সদস্য আছেন ততক্ষণ নাটোরে দুলুকে ঢুকতে দেবেন না। 

শিমুলকে স্বাগত জানিয়ে করা শোডাউন শেষ হলে রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও শহরে পাল্টা মোটর শোডাউন করে। শোডাউন শেষে কান্দিভিটুয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সভা করেন নেতারা। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শাহীনসহ অন্যরা। সভা শেষে কার্যালয়ের বাইরে সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন শরিফুল ইসলাম রমজান। 

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ পাচার করে কানাডার বেগমপাড়ায় বসতি গড়েছেন। দলের পদ হারিয়ে সেখানে সপরিবারে বসবাস করে তিনি দেশে ফিরে সংবর্ধনা নিয়েছেন। এটা আওয়ামী লীগের জন্য অনেক বড় লজ্জা। তিনি নাটোরে ফিরে অপরাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন। বিএনপি নেতা দুলুর বিরোধিতা করে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, অপরাজনীতি করে পার পাওয়া যাবে না। নাটোরে রাজনীতি করতে হলে আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ মেনেই করতে হবে।’ 

এ ব্যাপারে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘আমি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নাটোর শহরে দুলুকে রাজনীতি তো দূরের কথা ঢুকতেও দিই নাই। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সময় দুলু নাটোরে এসে রাজনীতি করে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে চলে গেছেন। এটা দলের বর্তমান নেতৃত্ব প্রতিহত করতে পারেন নাই। তাই আমি নাটোরে পা রেখেই দুলুকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছি। অথচ দলের সমর্থন তো পেলামই না, উল্টো দুলুর বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে অপরাজনীতির শিকার হতে হলো। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে জানাব।’ 

এদিকে, সাংসদ শিমুল নিজ বাসভবনে ও সাধারণ সম্পাদক রমজান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। দুই জায়গার দূরত্ব মাত্র কয়েকশ হাত। ফলে উভয় নেতার অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থানে বলা যায়। এ নিয়ে যে কোনো সময় উত্তেজনা তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত