Ajker Patrika

আমূল বদলে যাচ্ছে রাজশাহীর ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক

রিমন রহমান, রাজশাহী
আমূল বদলে যাচ্ছে রাজশাহীর ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক

রাজশাহীর শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক আমূল বদলে যাচ্ছে। একসময় ঝোপঝাড়ে ভরে থাকা পার্কটিতে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। ৪৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটিকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নতুন রূপে। পার্কটির কাজ শেষ হওয়ার পথে।

নগরীর ভদ্রা এলাকায় প্রায় ১৩ একর জায়গার ওপর ১৯৮২ সালে পার্কটি গড়ে তোলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। এটি ‘ভদ্রা পার্ক’ নামেই পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটির বদনামও ছিল। অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের নিয়ে এই পার্কে যেতে পারতেন না। তবে সংস্কার শেষে পার্কটির আর সেই বদনাম থাকবে না। এটি হয়ে উঠবে শিশুদের নির্মল বিনোদনের স্থান। প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবারের মতো সংস্কার কাজ চলছে পার্কটিতে।

আরডিএ থেকে জানা গেছে, পার্কটির উন্নয়নে ২০২০ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সে বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। কাজের প্রস্তুতি নিতে নিতেই ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন পার্কে পুরোদমে কাজ চলছে।

এর মধ্যে দুটি লটে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে রিথিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ড্রেন, জলাধারের জন্য রিটেইনিং ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, পুকুর সংস্কার, পুকুর থেকে পারিজাত লেক পর্যন্ত খাল খনন, জলাধারের ওপর তিনটি নান্দনিক ব্রিজ, রাস্তাঘাট, অ্যাম্পি থিয়েটার, রিফ্রেশ জোনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে। এ ছাড়া ১৩ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করছে পার্কের সার্ভিস স্টেশন, দুটি টয়লেট ব্লক, পার্কের বাইরে রেস্ট হাউস, পার্কিং স্টেশন, ট্রয় ট্রেন স্টেশন ও প্লেয়িং জোন।

রিথিন এন্টারপ্রাইজের এসব কাজ শেষ হওয়ার পর প্রাইম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রেন, বোটসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড স্থাপন করবে। তাতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এ ছাড়া মদিনা এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের কাজ সম্পন্ন করবে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯২ টাকা। পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনে শেষপর্যায়ে পুরো এলাকাতেই আবার বৃক্ষরোপণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার দিচ্ছে প্রায় ৪৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি দিচ্ছে আরডিএ।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি পার্কের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পুরো পার্কজুড়ে চলছে সংস্কারকাজ। পুরোনো জীর্ণ পুকুরটি সংস্কার করা হয়েছে। চারপাশের পাড় বাঁধানো হয়েছে। পুকুর থেকে খাল খনন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্কের বাইরের পারিজাত লেক পর্যন্ত। এই খালের ওপর থাকবে তিনটি নান্দনিক ব্রিজ। ইতিমধ্যে দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। পার্কের সামনে আরডিএ কর্মকর্তাদের জন্য রেস্ট হাউস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। ভেতরে ইতিমধ্যে অ্যাম্পি থিয়েটারের মঞ্চ নির্মাণ হয়েছে।

পার্কটির সংস্কার করায় খুশি ভদ্রা আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। সারোয়ার জাহান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই পার্কটা শহীদ জাতীয় চার নেতার একজনের নামে করা। অথচ আগে এর ভেতরে ঢোকার মতো পরিবেশ ছিল না। পার্কের ইজারাদাররা কোনো কিছুই নজরদারি করতেন না। ভেতরে নানারকম অসামাজিক কার্যক্রম চলত। কোনো অভিভাবক তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলে লজ্জায় বের হয়ে চলে আসতেন। এত দিন পর পার্কটার সংস্কার হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। এখন এখানে শিশুদের নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দ্রুতগতিতে সুন্দরভাবেই পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন এটি রাজশাহীর মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম সেরা স্থান হয়ে উঠবে। বিশেষ করে শিশুরা এখানে নির্মল বিনোদন পাবে। সেভাবেই পার্কটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত