Ajker Patrika

আধুনিকায়নের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তাঁতশিল্পীরা

ওয়াহিদুজ্জামান, বেড়া (পাবনা) 
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১১: ১৮
আধুনিকায়নের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তাঁতশিল্পীরা

করোনা মহামারির পর পাবনার তাঁতিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ঈদে হাজার কোটি টাকার বাজার ধরার জন্য বাণিজ্যিক, এনজিওসহ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাঁত কারখানা চালু করেছেন। গত দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে তাঁতপল্লিতে এখন চলছে দিনরাত ব্যস্ততা। আধুনিক প্রযুক্তির গ্রাফিকস ডিজাইন ব্যবহার করা শাড়ি-লুঙ্গির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিল্পকে নিয়ে তাঁরা আশার আলো দেখছেন। অন্যদিকে, আধুনিক প্রযুক্তির কাছে টিকতে পারছে না সনাতন পদ্ধতিনির্ভর তাঁত ও তাঁতি সম্প্রদায়।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে এই অঞ্চলের অনেক তাঁতি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিত্যনতুন ডিজাইনের শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন। তাঁদের উৎপাদিত শাড়ি-লুঙ্গি এরই মধ্যে দেশের মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের চাহিদার পাশাপাশি এই অঞ্চলের শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে। ভারতের ব্যবসায়ীরা ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে পাবনা জেলার বিভিন্ন পাইকারি হাটে এসে শাড়ি-লুঙ্গি কিনে নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বন্ধ তাঁত কারখানা আবার চালু করেছেন। 

বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম দক্ষিণ মহল্লার এক তাঁত কারখানার মালিক হাজি সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার দুই বছর আমাদের কারখানার উৎপাদিত লুঙ্গির চাহিদা কমে গিয়েছিল। কারখানার ২৪টি তাঁতের মধ্যে ১৫টিই বন্ধ করে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনার সংকট কেটে গেলে তাঁতগুলোতে মান্ধাতা আমলের উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন করে সেগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু করেছি। গ্রাফিকস ডিজাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন নতুন নতুন নকশার শাড়ি-লুঙ্গি নিয়ে বাজারে হাজির হচ্ছি। এতে করে ভালো দামে শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি করতে পেরে আশার আলো দেখছি।’ 

কারখানার মালিক আরও বলেন, যাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন, তাঁরা এ ঈদের বাজারে উৎপাদিত কাপড় বিক্রিতে সুবিধা করতে পারছেন না। প্রতিযোগিতা ও আধুনিকতায় যাঁরা টিকতে পারছেন না, তাঁরা পিছিয়ে পড়ছেন। 

বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এলাকার প্রান্তিক তাঁতি যাঁরা মান্ধাতা আমলের তাঁত লাটাই ব্যবহার করছেন, তাঁরা সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। এসব তাঁতি নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরি করতে সক্ষম না হওয়ায় শ্রমের মজুরি হারাচ্ছেন। অনেকে ক্ষতির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে না পেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন। 

বেড়া উপজেলার মালদাপাড়া গ্রামের তাঁতি একরাম হোসেন বলেন, ‘আমাগরে গ্রাম আর পাশের প্যাঁচাকোলা গ্রামে বছরখানেক আগেও হাজার চারেক তাঁত চালু ছিল। এখন অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ। আমিও দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ রাখিছিল্যাম। ঈদ উপলক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি তাঁত আধুনিকায়ন করেছি। এখান যে লুঙ্গিগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা থাকায় এখন বেজায় খুশি।’ 

বেড়া উপজেলা প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শফিউল আযম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন তাঁতিদের নিয়ে কাজ করেছি। এখন সময় বদলে গেছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাবনার তাঁতশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে বন্ধ হওয়া তাঁতগুলো আবার সচল হবে।’ 

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সবুর আলী বলেন, তাঁতিদের সহায়তার ব্যাপারে কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে সহায়তা করা হবে। 

উল্লেখ্য, পাবনা জেলা তাঁত বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় হাতলুম (খটখটি), পাওয়ারলুম (চিত্তরঞ্জন) ও আধুনিক প্রযুক্তির ৬৪ হাজার তাঁত রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রায় দুই লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা যেমন নির্ভর রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনা রয়েছে সঠিক কর্মপরিকল্পনার। সরকার এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অগ্রগতিও বাড়াতে পারে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত