Ajker Patrika

দুই ভাইয়ে তটস্থ কাটাখালীর সবাই

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ৩১
দুই ভাইয়ে তটস্থ কাটাখালীর সবাই

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ নির্মাণের কাজ চলছে। হঠাৎ কয়েকজন তরুণ সেখানে হাজির। ঠিকাদারকে বললেন, কাজ করতে হলে তাঁদের ‘খুশি’ করতে হবে। ঠিকাদারও নাছোড়বান্দা, ছোট এই কাজের জন্য তিনি কাউকে চাঁদা দেবেন না। শেষে রেগেমেগে স্কুল প্রাঙ্গণে থাকা দেড় হাজার ইটই নিয়ে গেছেন ওই চাঁদাবাজেরা। এভাবে দিনদুপুরে ইট লুট করায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌর এলাকার বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই অফিসকক্ষ নির্মাণের কাজ প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ।

কারা এই ইট লুট করেছে জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বললেন, ‘এই ছেলেগুলা শরীয়তের সঙ্গে মেশে। আমি স্থানীয় লোক। এর চেয়ে বেশি কথা বলতে পারব না।’

কাটাখালী এলাকায় এখন তুমুল আলোচিত নাম শরীয়ত আলী সৈকত। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আর তাঁর ভাই আবু সামা সভাপতি। গত বছরের ২১ মার্চ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবু সামাকে সভাপতি ঘোষণা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকেই দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ।

এদিকে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ থাকলেও সে বিষয়ে জানে না পুলিশ। জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে আইনগত যে প্রক্রিয়া, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, আবু সামা ছিলেন শাটারিং মিস্ত্রি। আর শরীয়ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার পর দখলদারি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা। আবু সামা পড়াশোনা না জানলেও আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার পরই মাসকাটাদীঘি স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি হয়েছেন। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কাটাখালী ও মতিহার থানায় চারটি মামলা রয়েছে। কাটাখালী থানায় মামলাগুলো হয়েছে ২০১৯ ও ২০২০ সালে। আর মতিহার থানায় মামলাগুলো হয়েছে ২০১০ ও ২০১৩ সালে। কাটাখালী থানার ২০২০ সালের মামলাটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের। এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আবু সামা।

সামার ভাই শরীয়তের বিরুদ্ধেও কাটাখালী থানায় তিনটি ও মতিহার থানায় একটি মামলা আছে। মতিহার থানার মামলাটি হয়েছিল ২০১৩ সালে। কাটাখালী থানার তিন মামলা হয়েছে ২০১৯ ও ২০২০ সালে। ২০২০ সালের মামলাটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের।
পুলিশ সূত্র বলেছে, দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে রাজশাহী নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনারকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ২০১৯ সালে নজরুল ইসলাম নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করেন শরীয়ত। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। নজরুল বলেন, তিনি এখনো বিচার পাননি। মুখ খুলতেও সাহস পান না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পরই রফি আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন শরীয়ত। তিনি ও তাঁর ভাই আবু সামার বিরুদ্ধে কাটাখালী এলাকার মাছের আড়তে দোকান দখলের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। পরে অবশ্য ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে রেহাই পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আড়তদার সাদেক আলী বলেন, তাঁদের এখানে সাতজন ব্যবসায়ী সাতটি দোকানঘর কিনে এক যুগ ধরে ব্যবসা করছেন। কয়েক মাস আগে এক ভোরে শরীয়তের লোকজন এসে বলে, এই আড়তে আর কোনো মাছ নামবে না। আড়ত চালাতে হলে তাঁদের একটি দোকানঘর দিতে হবে। পরে আরেক দিন আবু সামা গেলে তাঁর হাতে ৩৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আর কেউ দোকান দখল করতে যায়নি।

জাহাঙ্গীর আলম নামের স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, ‘আমি জমি বেচব না। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি আমাকে বেচতে বাধ্য করেছেন। তবে আমি কোনো টাকা পাইনি।’ কাটাখালীর বেলঘরিয়া বাজারে টেলিভিশন মেরামতের কাজ করেন জহুরুল ইসলাম বশের। তাঁর অভিযোগ, তাঁর দেড় বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন আবু সামা ও তাঁর ভাই শরীয়ত। সম্প্রতি মারা গেছেন স্থানীয় সাঈদা বিবি নামের এক বৃদ্ধা। তাঁর সৎ মেয়ে জয়গন বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পিয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাঁর মায়ের সাড়ে ৩ কাঠা জমি কিনতে চান। দলিল লেখকদের কাছে গিয়ে তিনি জমি লিখে নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ দেখালেও টাকা দেননি। পিয়ারুল বলেছিলেন, বাড়ি গিয়ে টাকা দেবেন। বাড়ি এসে মাত্র ১৪ হাজার টাকা দেন তিনি। পরে শরীয়ত ওই জমি পিয়ারুলের হয়ে দখল করেন।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, ‘আবু সামা শাটারিং মিস্ত্রি ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে এখন সে কলেজের সভাপতি। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যে সে করে না। তার পৃষ্ঠপোষকতায় মাদক ব্যবসাও চলে। বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। কাটাখালীর অবস্থা এখন ভালো নয়।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। স্কুলের ইট লুটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নই।’ রফি আহমেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছি মাত্র। চাঁদা আদায় করিনি।’ জহুরুল ইসলাম বশেরের জমি দখলের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। আর সাঈদা বিবির জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, পিয়ারুলের সঙ্গে সাঈদা ও তাঁর ছেলের আগে কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না। পরে তিনি পিয়ারুলের কাছ থেকে জমিটা কিনে নিয়েছেন।

বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু সামা মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কী করি না করি, সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের খোঁজ নিতে হবে?’ এর পরই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। জানতে চাইলে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ওরা তো আমার কাছে আসে না। ওরা থাকে এমপির কাছে। ক্ষমতার কাছে থেকেই তো এসব করবে।’

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘দুই ভাই কিছুদিন আগে মসজিদের সামনে রাস্তার ওপর দোকান নির্মাণ করেছে বলে শুনেছিলাম। এ ছাড়া কিছু কখনো শুনিনি। আবু সামা অসুস্থ মানুষ, সে এসব করতে পারে না। তবে তার ভাই শরীয়তের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

সিলেট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন স্থগিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক সাঈদা পারভীন জানান, কয়েকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য এটি স্থগিত করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে দুই বছর মেয়াদি (২০২৫-২৬) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে আগামী ১ নভেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৩
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেল গাজী (৪৫), মো. রোকন খান (৩৩), রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রাসেল, রাজিব ও জাহিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রোকন খান মামলার বিচার চলাকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

অজিবর রহমান আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর গ্রেপ্তার এই চার আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি এলাকায় এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। প্রথমে ৯ নভেম্বর ঘরে ঢুকে রাসেল গাজী তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এর পরদিন ওই নারী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। চালক তাঁকে নিয়ে ভুল পথে রওনা দেন। একপর্যায়ে আসামিরা মোটরসাইকেলে তাঁর পিছু নেন এবং নির্জন স্থানে পৌঁছে গৃহবধূকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার ৫ নারী ও শিশু, মানব পাচারকারী আটক

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের হাবিরছড়াসংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে চার নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় মানব পাচারকারী অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটক পাচারকারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিবছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৫৫)।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন রশিদ বলেন, আটক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে নারী-শিশুসহ কয়েকজনকে হাবিরছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে চার নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও অল্প খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদে ফেলে। পাচারের আগে তাদের পাহাড়ি এলাকায় বন্দী রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো।

উদ্ধার ব্যক্তিদের ও আটক মানব পাচারকারীর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি-যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি। পুলিশ তাঁর অভিযোগ তদন্ত করছে।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম (৪০) ও তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো. ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জেরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।’

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করেন। একপর্যায়ে কুসুম হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।’ ইয়াসিন গলা চেয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।’ প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বলেন, ‘এ মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।’ পরে অনেকে ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক লুৎফর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীসের বিএনপি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাঁকে মেরেই ফেলত।’

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত