Ajker Patrika

রাজশাহী জেলায় চাহিদার ১৩ গুণ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন, তবু দামে ডাবল সেঞ্চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ৪২
রাজশাহী জেলায় চাহিদার ১৩ গুণ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন, তবু দামে ডাবল সেঞ্চুরি

রাজশাহী জেলায় চাহিদার ১৩ গুণ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তারপরও বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের মনিটরিংয়ের পরেও বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না। ফলে ক্রেতাদের অনেকেই কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহীতে চাহিদার প্রায় ১৩ গুণ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও অন্য জেলায় সমানভাবে হয় না। তাই রাজশাহীর পেঁয়াজ চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে। ফলে এখানকার মজুত কমে যায়। আবার অন্যান্য জেলায় যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তখন এখানেও দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে উৎপাদন বেশি হলেও রাজশাহীতে পেঁয়াজের দাম কমে না। এখনো অন্যান্য জেলার সঙ্গে এখানেও দাম বাড়ানো হচ্ছে। 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষের দৈনিক ৩০ গ্রাম করে পেঁয়াজের চাহিদা ধরা হয়। এতে জেলায় দৈনিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৯০ মেট্রিক টন। সারা বছরে চাহিদা হয় ৩২ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। আর সারা বছরে জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন হয় প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এটি জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ বেশি। জেলায় উদ্বৃত্ত থাকে ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। 

রাজশাহীতে মে মাসে ওঠে স্থানীয় তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ চারা থেকে হয়। এটি দেশি পেঁয়াজ। এর উৎপাদনই হয় ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এই পেঁয়াজকে আবার বীজ হিসেবেও লাগানো যায়। তখন এটি মুড়িকাটা বা ঢ্যামনা হিসেবে পরিচিত। এর উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উঠছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭ হাজার ১৮২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাজারে আসছে। এরপরও এখন পেঁয়াজের সংকটের কথা বলা হচ্ছে। 

রাজশাহীতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও এর প্রভাব নেই বাজারে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে দাম। রোববার দেশি জাতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। একদিনের ব্যবধানেই এই দুই জাতের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা করে বেড়েছে। 

নগরীর সাহেববাজারের সবজি বিক্রেতা সুজন আলী জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে পাইকারি দোকান ও আড়তগুলোতে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই খুচরা পর্যায়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। 

রোববার সকালে পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাকিব হাছান খাঁন। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিন আমরা সতর্ক করেছি যেন কেউ অস্বাভাবিক বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করেন। ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন যে, তারা চাষির কাছ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে কমিশনে বিক্রি করেন। চাষিরা নাকি বলেছেন যে, বাজারে পেঁয়াজের সংকট। বেশি দামে বিক্রি না করলে পেঁয়াজ দেবেন না। ব্যবসায়ীদের দাবি, কেজিতে তারা মাত্র দেড় টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন।’ 

যদিও চাষিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী। তিনিও রোববার রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করেন। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। 

ফজলে এলাহী বলেন, ‘রাজশাহীর বাজারে পেঁয়াজ আসে পুঠিয়ার বানেশ্বরের আড়তগুলো থেকে। ওই আড়তে পেঁয়াজ কেনার রশিদ আমরা যাচাই করেছি। কেনাদরের চেয়ে ন্যায্যমূল্য ধরে গতকাল (শনিবার) আমরা নতুন পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে বলেছি। আজ রোববার বিক্রি করতে বলেছি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে। পুরোনো দেশী পেঁয়াজ বাজারে কম। সেটা ২০০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে। আমরা আগামীকাল সোমবার আড়তগুলো নজরদারি করব।’ 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘বছরে আমাদের ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকে। রাজশাহীর সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে এই পেঁয়াজ আমরা দেশের ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে একদিন খাওয়াতে পারব। কিন্তু সব জেলায় সমানভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় না। তাই সংকট দেখা দেয়। তখন দাম বাড়ে। এটি দেখে রাজশাহীতেও দাম বেড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত