Ajker Patrika

একই সঙ্গে স্কুল-কলেজে যমজ ভাই, পেলেন পুলিশের চাকরিও

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ৪৫
Thumbnail image
একই সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবলে চাকরি পেয়েছেন যমজ ভাই। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাহিদের জন্মের পাঁচ মিনিট পর জন্ম নেন জাহিদ। দুই ভাই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গেই পড়াশোনা করেন। ভর্তিও হয়েছেন একই কলেজে। সামনে দুই ভাইয়ের একসঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা আছে। তার আগে দুই ভাই একসঙ্গেই চাকরি পেলেন পুলিশে। দুই ভাইয়ের চাকরি হওয়ায় তাঁদের কৃষক বাবার খুশির সীমা নেই।

নাহিদ হাসান ও জাহিদ হাসানের বয়স ১৯ বছর। তাঁরা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধোরসা গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইসাহাক আলীর ছেলে। তাঁদের মা সেলিনা বেগম গৃহিণী। বড় বোন ইসরাত জাহান রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের প্রত্যেকে আবেদনের মাত্র ১৪০ টাকা খরচ করে পেলেন পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজশাহী জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। জেলা পুলিশ লাইনসের ড্রিল শেডে মাইকে যখন এই ফল ঘোষণা করা হচ্ছিল তখন জাহিদ আর নাহিদ বসেছিলেন সামনে। আর তাঁদের বাবা ইসাহাক আলী বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অপেক্ষায়। তালিকার ৭ নম্বরে প্রথমে ঘোষণা করা হয় বড় ভাই নাহিদের নাম। এরপর ১৭ নম্বরে ঘোষণা করা হয় জাহিদের নাম।

দুই ছেলের নাম শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইসাহাক আলী। খুশিতে চোখের পানি থামছিলই না নাহিদ ও জাহিদেরও।

বড় ভাই নাহিদ বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবিনি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এত সহজে চাকরি হয়। আমাদের ধারণাই বদলে গেছে। আমরা খুব খুশি।’

ছোট ভাই জাহিদ বলেন, ‘আমরা দুই ভাই একসঙ্গে জন্ম নিয়েছি, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। একসঙ্গেই যে চাকরি হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আমরা সবাই খুব খুশি। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে জন্ম নেন এ দুই ভাই। এরপর মোহনপুরের মতিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে প্রাথমিক পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয় দুই ভাই। পরে মতিহার উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে একসঙ্গেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে দুই ভাই। জাহিদ পায় জিপিএ ৪.৮৩, আর নাহিদ ৪.৯৪। এরপর দুই ভাই একসঙ্গেই দুর্গাপুরের দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এখন দ্বিতীয় বর্ষ চলছে। সামনে তাঁরা একসঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে।

জাহিদ ও নাহিদের বাবা ইসাহাক আলী বলেন, ‘আমার দুই ছেলেকে কষ্ট করে বড় করেছি। আমি বাইরেই বসেছিলাম। যখন মাইকে প্রথম এক ছেলের নাম শুনলাম, তখন আরেক ছেলের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু যখন দুই ছেলের নামই শুনলাম, তখন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।’

ইসাহাক আলী বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, কর্ম করে খাই। দুপয়সা লাগলে আমার দেওয়ার সাধ্য ছিল না। সেই জায়গায় কোনো টাকা ছাড়াই যে চাকরি হলো, সেটা তো আমি ভাবতেও পারিনি আগে। আমার ধারণাই ছিল না যে টাকা ছাড়াও সরকারি চাকরি হয়। দুই ছেলেকে বলে দিয়েছি, টাকা ছাড়াই চাকরি হয়েছে। সততার সঙ্গে চাকরি করতে হবে যাতে আমার মুখ থাকে।’

রাজশাহী জেলায় এবার ৭৬টি শূন্যপদের বিপরীতে কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। মোট ৭ হাজার ৬২২ জন পরীক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৬ হাজার ২০১ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।

শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে ৭২২ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। উত্তীর্ণ হন ২৪৫ জন। এরপর তাঁরা মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

এই পরীক্ষা শেষে রাজশাহী জেলার নিয়োগ বোর্ড ৭৬ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে। এর মধ্যে নারী ১৬ জন এবং পুরুষ ৬০ জন।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান ফল ঘোষণা করেন। এ সময় বোর্ডের আরও দুই সদস্য বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আব্দুর রশিদ (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ও নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলীও উপস্থিত ছিলেন।

ফল ঘোষণার পর এসপি মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘যাঁরা কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেলেন, তাঁদের অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবার থেকে এসে এই চাকরি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। একটি কৃষক পরিবার থেকে যমজ দুই ভাই চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। এই নিয়োগের সব পর্যায়ে আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সততা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত