আসাদ সরকার
৭৩ বছরের সন্তোষ তরণী ও ৬৫ বছরের সাধবী তরণীকে প্রথম দেখাতেই এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হলো। দুজন দুজনের হাত ধরে হেলেদুলে এমনভাবে কাছে এলেন, যেন ১৩ বছরের কোনো কিশোর-কিশোরী বন্ধু তাঁরা। দু-এক কথাতেই বুঝতে পারলাম, কেন তাঁদের সবাই পাগলা-পাগলি ডাকেন। তবু সে বিষয়ে বিস্তারিত শোনার আগে একটা গান শুনতে চাইলাম। বলতে না বলতেই সাধবী তরণী ও সন্তোষ তরণীর দুই হাত ধরে গাইতে শুরু করলেন: ‘আমি পাগল দেওয়ানা হয়েছি, যখন পাগলা তোমার প্রেমে পড়েছি।’ গানের সঙ্গে সঙ্গে দুজনের শারীরিক পরিবেশনায় মনে হলো সাদাকালো যুগের কোনো সিনেমার দৃশ্য।এই পাগলা-পাগলি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বাঁধের ওপর ছোট্ট একটা ঘরে থাকেন। ছোটবেলা থেকেই একটু বুদ্ধি কম বলে পারিবারিক বা সামাজিকভাবেই সন্তোষকে পাগলা ডাকা হতো আর সাধবীকে ডাকা হতে পাগলি। সম্পর্কে তাঁরা মামাতো ভাই-বোন। ১৩ বছর বয়সে সন্তোষ জেদ ধরল সাধবীকেই বিয়ে করবে। নিজে পাগলা তাই পাগলি ছাড়া কিছুতেই বিয়ে করবে না। কিন্তু দুই পরিবার কিছুতেই তা মানেনি। অগত্যা পাগলা-পাগলি পালিয়ে গেল। শুরু হলো তাদের সংগ্রামী জীবন। সন্তোষ গান গাইতে পারত, আর সাধবী বাজাতে পারত খঞ্জনি। গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে সাহায্য নিয়ে শুরু হলো সংসারজীবন। শুরুতে শুধু খঞ্জনি বাজালেও ধীরে ধীরে গানটাও শিখে নেয় সাধবী। তারপর দুজন মিলে শুরু করে দ্বৈত গান গাওয়া, যা পরিচিত হয়ে গেল পাগলা-পাগলির গান হিসেবে।
১৩ বছর বয়সে শুরু হওয়া পাগলা-পাগলির পথচলা ৬০ বছরে পা দিয়েছে চলতি বছর। এর মধ্যে তাঁদের ঘরে এসেছে চার কন্যা ও এক পুত্র। কথা হলো কন্যা সাথির সঙ্গে। একমাত্র সে-ই মা-বাবার মতো গান করে। ‘আমাদের খুব কষ্ট, বাবু। কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে বেঁচে থাকি। গান শুনে এখন আগের মতো মানুষ সাহায্য করে না’—কথাগুলো বলতে গিয়ে দু-চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকল সাথির। তবুও কেন গানের সঙ্গেই থাকা—জানতে চাইলে সরল উত্তর তার: ‘মা-বাবার মতো আমিও পাগলি। তাই গান ছাড়া থাকবার পারি না।’ উত্তর শুনে হাসি পেলেও নিজেকে সংযত করি। কারণ, সাথি, সন্তোষ কিংবা সাধবী কাউকেই প্রকৃত পাগল মনে হয়নি। তবে সংস্কৃতির প্রতি পাগল তাঁরা। সাথির কাছে পাওয়া একটা তথ্য শুনে একেবারে চমকে উঠি। ১৩ থেকে ৭৩ বছর—এক দিন, এক মুহূর্তের জন্যও পাগলা-পাগলি অর্থাৎ সন্তোষ-সাধবী কখনো আলাদা হননি। এমনকি বাজারে গেলেও সঙ্গে গেছেন দুজন। মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে তাঁদের দিকে তাকালে কিছুটা লজ্জা পান সাধবী। তবে মুহূর্তেই সে লজ্জা কেটে যায়। তারপর আচমকাই সন্তোষের দু-হাত ধরে গেয়ে ওঠেন: ‘তুমি জীবনে তুমি মরণে ওরে প্রাণের বান্ধবরে।’ সন্তোষও হাতের একতারাটা বাজিয়ে গলা মেলান সঙ্গে।
সন্তোষ-সাধবীকে সবাই পাগলা-পাগলি ডাকে; কিন্তু তাঁরা যে স্বামী-স্ত্রীর অপরিসীম বন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, তা বোধ হয় কারও চোখে পড়ে না।
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
৭৩ বছরের সন্তোষ তরণী ও ৬৫ বছরের সাধবী তরণীকে প্রথম দেখাতেই এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হলো। দুজন দুজনের হাত ধরে হেলেদুলে এমনভাবে কাছে এলেন, যেন ১৩ বছরের কোনো কিশোর-কিশোরী বন্ধু তাঁরা। দু-এক কথাতেই বুঝতে পারলাম, কেন তাঁদের সবাই পাগলা-পাগলি ডাকেন। তবু সে বিষয়ে বিস্তারিত শোনার আগে একটা গান শুনতে চাইলাম। বলতে না বলতেই সাধবী তরণী ও সন্তোষ তরণীর দুই হাত ধরে গাইতে শুরু করলেন: ‘আমি পাগল দেওয়ানা হয়েছি, যখন পাগলা তোমার প্রেমে পড়েছি।’ গানের সঙ্গে সঙ্গে দুজনের শারীরিক পরিবেশনায় মনে হলো সাদাকালো যুগের কোনো সিনেমার দৃশ্য।এই পাগলা-পাগলি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বাঁধের ওপর ছোট্ট একটা ঘরে থাকেন। ছোটবেলা থেকেই একটু বুদ্ধি কম বলে পারিবারিক বা সামাজিকভাবেই সন্তোষকে পাগলা ডাকা হতো আর সাধবীকে ডাকা হতে পাগলি। সম্পর্কে তাঁরা মামাতো ভাই-বোন। ১৩ বছর বয়সে সন্তোষ জেদ ধরল সাধবীকেই বিয়ে করবে। নিজে পাগলা তাই পাগলি ছাড়া কিছুতেই বিয়ে করবে না। কিন্তু দুই পরিবার কিছুতেই তা মানেনি। অগত্যা পাগলা-পাগলি পালিয়ে গেল। শুরু হলো তাদের সংগ্রামী জীবন। সন্তোষ গান গাইতে পারত, আর সাধবী বাজাতে পারত খঞ্জনি। গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে সাহায্য নিয়ে শুরু হলো সংসারজীবন। শুরুতে শুধু খঞ্জনি বাজালেও ধীরে ধীরে গানটাও শিখে নেয় সাধবী। তারপর দুজন মিলে শুরু করে দ্বৈত গান গাওয়া, যা পরিচিত হয়ে গেল পাগলা-পাগলির গান হিসেবে।
১৩ বছর বয়সে শুরু হওয়া পাগলা-পাগলির পথচলা ৬০ বছরে পা দিয়েছে চলতি বছর। এর মধ্যে তাঁদের ঘরে এসেছে চার কন্যা ও এক পুত্র। কথা হলো কন্যা সাথির সঙ্গে। একমাত্র সে-ই মা-বাবার মতো গান করে। ‘আমাদের খুব কষ্ট, বাবু। কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে বেঁচে থাকি। গান শুনে এখন আগের মতো মানুষ সাহায্য করে না’—কথাগুলো বলতে গিয়ে দু-চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকল সাথির। তবুও কেন গানের সঙ্গেই থাকা—জানতে চাইলে সরল উত্তর তার: ‘মা-বাবার মতো আমিও পাগলি। তাই গান ছাড়া থাকবার পারি না।’ উত্তর শুনে হাসি পেলেও নিজেকে সংযত করি। কারণ, সাথি, সন্তোষ কিংবা সাধবী কাউকেই প্রকৃত পাগল মনে হয়নি। তবে সংস্কৃতির প্রতি পাগল তাঁরা। সাথির কাছে পাওয়া একটা তথ্য শুনে একেবারে চমকে উঠি। ১৩ থেকে ৭৩ বছর—এক দিন, এক মুহূর্তের জন্যও পাগলা-পাগলি অর্থাৎ সন্তোষ-সাধবী কখনো আলাদা হননি। এমনকি বাজারে গেলেও সঙ্গে গেছেন দুজন। মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে তাঁদের দিকে তাকালে কিছুটা লজ্জা পান সাধবী। তবে মুহূর্তেই সে লজ্জা কেটে যায়। তারপর আচমকাই সন্তোষের দু-হাত ধরে গেয়ে ওঠেন: ‘তুমি জীবনে তুমি মরণে ওরে প্রাণের বান্ধবরে।’ সন্তোষও হাতের একতারাটা বাজিয়ে গলা মেলান সঙ্গে।
সন্তোষ-সাধবীকে সবাই পাগলা-পাগলি ডাকে; কিন্তু তাঁরা যে স্বামী-স্ত্রীর অপরিসীম বন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, তা বোধ হয় কারও চোখে পড়ে না।
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
রাজধানীতে অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহায়তার জন্য অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে ৪২৬ জন ‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’ নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রশিক্ষণ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেওয়ায় তাঁদের অনেকে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানেন না।
৫ ঘণ্টা আগেনতুন করে অচলাবস্থা দেখা দিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হলে আজ সোমবার বেলা ৩টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
৫ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৩৬টি খাল ঘিরে বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দে শুরু করা এ প্রকল্পের আকার এখন ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।
৫ ঘণ্টা আগেসরকার পতনের পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়রকে অপসারণ ও কাউন্সিলদের বরখাস্ত করা হয়। এরপর জরুরি সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের পর এই বাড়তি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নাগরিক সনদ, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, রাস্তা মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণসহ
৫ ঘণ্টা আগে