Ajker Patrika

মিশন থেকে ফিরে ছোট বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন শরীফ

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ 
মিশন থেকে ফিরে ছোট বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন শরীফ

ছোট বোনের বিয়ের কথা চলছে। বিয়েতে যত টাকা খরচ হবে সবই বহন করবেন বড় ভাই। মিশন থেকে ফিরে আসলেই ধুমধাম করে ছোট বোনের বিয়ে দিতে দেবেন বড় ভাই শরীফ। কিন্তু সে আশা তাঁর আর পূরণ হলো না মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সেনা সদস্য শরীফ হোসেনের।

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন শরীফ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোবাইলে শরীফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর পরিবারকে। আজ বুধবার নিহতের ছোট ভাই কাউসার তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য শরীফ হোসেনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। 

বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার বেড়াখারুয়া গ্রামে শরীফের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুতে শোকে শরীফের মা পাঞ্জু আরা বেগম নির্বাক হয়ে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লেবু শেখ। কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর ভাই ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। সন্তানের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁর মা। শরীফের বাবা ও মা মাঝে মাঝে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু বলছেন, ‘তোমরা আমার শরীফকে আইনা দাও, এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না।’ 

অল্প বয়সে ছেলে এভাবে চলে যাবে কোনো দিন ভাবেননি। তাই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বারবার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছেন শরীফের মাপরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শরীফ। বাবা ছিলেন তাঁত শ্রমিক। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিশনে যাওয়ার ৬ মাস আগে বিয়ে করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরীফ সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে একমাত্র ছোট বোন লাকী খাতুনের দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। 

নিহত সেনা সদস্য শরীফ হোসেনের ছোট ভাই কাউসার তালুকদার বলেন, ‘আমার ভাই নিহত হয়েছে এই খবর আমরা পাই মঙ্গলবার রাতে। ঢাকা সেনানিবাস থেকে আমারদের জানানো হয় শরীফ মারা গেছে। খবরটা শুনে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করছে। আমার ভাই আমাদের একমাত্র সম্বল ছিল। আমার বোনের বিয়ে কথা চলছে। ভাই বলেছে বোনের বিয়ে দিকে যত টাকা লাগে আমি দেব। তোরা কোনো চিন্তা করিস না। আমি মিশন থেকে ফিরে বিয়ে দেব। সেই ভাই আজ নেই। এখন আমাদের কী হবে। ভাই আমাদের সংসার চালায়।’ 

নিহত সেনা সদস্য শরীফ হোসেনের বাবা লেবু শেখ বলেন, ‘আমি তাঁতের কাজ করতাম। ছেলের চাকরি হওয়ার পর থেকে কোনো কাজ করি না। ছেলেই সংসার চালায়। তাঁর চাকরির টাকা দিয়ে সংসারের সব খরচ চলে। মিশনের যাওয়ার ৬ মাস আগে ছেলেকে বিয়ে করাই। আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। এত অল্প বয়সে ছেলে এভাবে চলে যাবে কোনো দিন ভাবিনি। শরীফের মা কোনো কথায় বলতে পারছে না।’ 

শরীফের প্রতিবেশী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শরীফ ভালো একজন ছেলে ছিল। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলত। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আমরা ভালো একজন ছেলে হারালাম। সে দেশের হয়ে জীবন দিয়েছে। এটা এলাকার মানুষ হিসেবে আমাদের গর্ব।’ 

বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, ‘শরীফ নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আমি তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেই। সে আমাদের গর্ব। অত্যন্ত ভালো একটি পরিবারের শরীফ একজন ভালো ছেলে ছিল।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত