Ajker Patrika

সানোয়ারের তৈরি ধান মাড়াই যন্ত্রের কদর নওগাঁয়

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ০৮
সানোয়ারের তৈরি ধান মাড়াই যন্ত্রের কদর নওগাঁয়

কাঠ ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র (হারভেস্টর) তৈরি করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। শ্রমিক ছাড়াই খুব সহজে ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে এই যন্ত্রে। সানোয়ার নওগাঁর ধামইরহাটে উপজেলার দক্ষিণ চকযদু এলাকার বাসিন্দা।

সানোয়ারের পরিবার জানায়, ১৯৯৪ সালে অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি সানোয়ার। লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সঙ্গে কাঠের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একদিন শ্রমিকসংকটের কারণে বাবার সঙ্গে মাঠে ধান মাড়াই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। এমন বিড়ম্বনায় শ্রমিক ছাড়া সহজে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। 

২০১০ সালে জমি বর্গা রেখে ও ধারদেনা করে প্রায় ৭ লাখ টাকা নিয়ে উপজেলার আমায়তাড়া বাজার এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। এরপর সেখানে গড়ে তোলেন একটি ওয়ার্কশপ। অর্থের অভাবে খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও সেখানে অনেক কষ্টে কেটে গেছে তাঁর ১০টি বছর। লক্ষ্য ছিল ভালো মেশিন তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করার।

সানোয়ার জানান, প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন ধান মাড়ায় যন্ত্র তৈরির কারখানা। প্রথমে পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে হারভেস্টর তৈরির কাজ শুরু করেন। একসময় নিজেই এ যন্ত্র তৈরিতে দক্ষ কারিগর হয়ে গড়ে ওঠেন। পরে আর তাঁকে পেছনের তাকাতে হয়নি। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ওয়ার্কশপে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত হারভেস্টর তৈরির কাজ করছেন। শ্রমিকদের পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আমায়তাড়া বাজারে সাড়ে সাত শতক জমির ওপর ছেলের নামে গড়ে তুলেছেন ‘রাসেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। সেখানে ২০ থেকে ২৫টি ধান মাড়াই মেশিন বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। এসব মেশিন কিনতে নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রকারভেদে একেকটি হারভেস্টরের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা।

কারখানায় হারভেস্টর তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরাসানোয়ার বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পেলে এই যন্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। একদিকে আধুনিক যন্ত্র কৃষিক্ষেত্রে যেমন বিপ্লব ঘটাবে, তেমনি এই শিল্প থেকে সরকারও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’

ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২৫ থেকে ২৮ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ধান মাড়াই মেশিন (হারভেস্টর) তৈরিতে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। এতে লোহার অ্যাংগেল, পাতি, শিট, ডেপিনশিয়াল, ১৩ রিংয়ের দুটি এবং ১০ রিংয়ের একটি চাকা, ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হর্সের ডিজেলচালিত মেসিন, হুইল এবং হুইল বক্স, ওয়ারিংসহ রঙের প্রয়োজন হয়।

জামালপুরের শেরপুর এলাকার ক্রেতা মোজাফফর হোসেন জানান, এলাকায় শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। এ কারণেই ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি হারভেস্টর কিনেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আল জোবায়ের বলেন, উপজেলায় রাসেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপসহ ছোট-বড় প্রায় ৪৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সারকুলেশন হলে আবেদনের মাধ্যমে তাঁদের তালিকাভুক্ত করা হবে। এসব ওয়ার্কশপ থেকে তৈরি হারভেস্টরের কোয়ালিটি ভালো হওয়ায় উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এদের মধ্যে পত্নীতলা উপজেলার ভাই-ভাই এবং এম এম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ তালিকাভুক্ত রয়েছে বলে তিনি জানান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত