Ajker Patrika

খোলা আকাশের নিচে নমুনা সংগ্রহ, অধ্যক্ষ বলছেন বুথের টাকা দেবে কে?

প্রতিনিধি
খোলা আকাশের নিচে নমুনা সংগ্রহ, অধ্যক্ষ বলছেন বুথের টাকা দেবে কে?

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) একবছর ধরে খোলা আকাশের নিচেই চলছে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ। এখানে নেই কোনো উইস্ক কেবিন। রোদের মধ্যে রোগীর পাশে দাঁড়িয়েই ল্যাব সহকারীদের নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে তারা নিজেরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকছেন।

এছাড়া শীতকালে ল্যাব সহকারীরা পিপিই পরলেও এখন রাজশাহীতে অসহ্য গরম। এই দাবদাহে রোদের মধ্যে তারা পিপিই পরতে পারছেন না তারা। ফলে এখন ব্যক্তিগত সুরক্ষা বলতে শুধু একাধিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস আর স্যানিটাইজার। এভাবেই প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা।

রামেকে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য ভাইরোলজি বিভাগে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয় গত বছরের মার্চে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ। রামেক ক্যাম্পাসে চারু মামার ক্যান্টিনের সামনে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটি চেয়ার পেতে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম দিকে এক শিফটে ৯৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এরপর দুই শিফট চলতো। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখন চার শিফটে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গত সোমবার ও আজ বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্যান্টিনের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে নমুনা দেওয়ার অপেক্ষায় মানুষ। ক্যান্টিনের সীমানা প্রাচীরের পাশে দুটি চেয়ার-টেবিল পেতে বসেছেন দুজন ল্যাব সহকারী। আর তাঁদের পাশেই দুটি চেয়ারে রোগীকে বসিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আজ নমুনা দিতে এসেছিলেন একদল পুলিশ সদস্য। একজন বললেন, ‘নমুনা নিতে গিয়ে এখানকার কর্মীরাই যেন আবার আক্রান্ত না হয়ে পড়েন। তাঁরাই তো ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন।’

চারু মামার ক্যান্টিনের সামনে চেয়ার পেতে চলছে করোনার নমুনা সংগ্রহ। ছবি: আজকের পত্রিকারামেকের ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে প্রতিদিন রাজশাহী ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ১৫০টি নমুনা থাকে রাজশাহীর। এসব নমুনার সিংহভাগই চারু মামার ক্যান্টিনে সংগ্রহ করা হয়। এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীর ১৫ থেকে ২০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগেও সংক্রমণের হার ছিল অনেক বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিপিই না পরেই নমুনা সংগ্রহ করছেন ল্যাব সহকারীরা। তবে তাঁদের মুখে একাধিক মাস্ক রয়েছে। হাতে গ্লাভসও আছে। একটু পর পর হাতে দিচ্ছেন স্যানিটাইজার। ল্যাব সহকারীদের ভাষ্য, গরমের মধ্যে তাঁরা পিপিই পরতে পারছেন না। ঝুঁকি জেনেও এভাবেই নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

গত সোমবার নমুনা সংগ্রহ করছিলেন রামেকের ল্যাব সহকারী মাসুদ করিম ও মনিরুল ইসলাম। তাঁরা জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়। খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে টানা দুই ঘণ্টা পিপিই পরে থাকা সম্ভব হয় না। গরমে শরীর ভিজে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে যতটা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করেন। তাঁরা বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কক্ষে এসি লাগিয়ে উইস্ক কেবিন স্থাপন করলে ভালো হয়। তখন পিপিই পরে নিরাপদে নমুনা সংগ্রহ করা যাবে।

এ ব্যাপারে রামেকের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, শীতের সময় কর্মীরা পিপিই পরতেন। এখন গরমের কারণে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘কর্মীদের আগের চেয়ে সাহসও হয়েছে। তবে করোনা কতদিন থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। তাই একটা ভালো স্থায়ী বুথ করা দরকার। নমুনা সংগ্রহকারীদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি সেরে উঠেছেন বলেও জানান এ চিকিৎসক।

এতোদিনেও নমুনা সংগ্রহের জন্য কেন একটা বুথ করা গেল না, এ প্রশ্নে রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘বুথ করার টাকা কে দেবে? আমাদের তো জায়গাও নেই। এখন যে জায়গায় নমুনা নেওয়া হচ্ছে, সেটাও ছাত্রদের জায়গা। ক্যান্টিনের ভেতর তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে দেয় না। এরই মধ্যে দুইবার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। যেখানে যাওয়া হয়, সেখানেই বাধা আসে। বাধ্য হয়ে ক্যান্টিনের সামনে বাইরেই রোদের মধ্যে চেয়ার পেতে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। তবে কর্মীদের জন্য পিপিই আছে, তাঁরা পরেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

৩৫ বছর ভারতে, স্বামী–সন্তান রেখে দেশে ফেরার নোটিশ পেলেন পাকিস্তানি সারদা

পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা, তবু দায়িত্বের বোঝা

রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস: ১৬ দিনে শেয়ারদর বেড়েছে ৯৩ শতাংশ, কারসাজি সন্দেহে তদন্তের নির্দেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত