Ajker Patrika

শাজাহানপুরে ফুলের বাণিজ্যিক চাষ, লাভবান কৃষকেরা

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া) 
Thumbnail image
শাজাহানপুর উপজেলার খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে ফুলের চাষাবাদ দেখাশোনা করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়া শাজাহানপুরে পাঁচ বছর আগেও উল্লেখযোগ্য ফুল চাষের দেখা মেলেনি। শখ করে অনেকেই বাড়ির আঙিনায় ফুলের বাগান করতেন। সম্প্রতি উপজেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ফুলের বাগান। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। কিন্তু সরেজমিনে এর বেশি জমিতে ফুলের চাষ করতে দেখা গেছে।

বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষাবাদ হচ্ছে শাজাহানপুর উপজেলার খোট্রাপাড়া, আড়িয়া, গোহাইল, মাঝিড়া ইউনিয়নের সুজাবাদ এলাকায়। চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, জিপসিসহ দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির ফুল। রাজধানীর শাহবাগ, সাভার, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এসব ফুল যাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামের ফুল চাষি জান্নাতুল ফেরদৌস জনির সঙ্গে কথা হয়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা ও ডোকলাপাড়া গ্রামে ১২ বিঘা জমি পত্তন নিয়ে ফুলের চাষ করছি। আমার চাষ করা ফুলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, জারবেরা, ডাচ গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, রথস্টিক, গাঁদাসহ বেশ কিছু প্রজাতির ফুল।

জনি আরও বলেন, বাগান থেকে প্রতিদিন ফুল তুলে বাজারে পাঠানো হয়। বগুড়া শহরে ছাড়াও রাজধানীর শাহবাগ, সাভার, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় আমার ফুল যায়। রোগবালাই হলে সাধারণত কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকি। এর বাইরে কৃষি অফিসের কেউ মাঠে এসে ফুল চাষের খবর নেয় না। তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলায় অনেকেই এখন ফুলের চাষ করছেন।’ তবে অভিজ্ঞতা ছাড়াই শুধু ঝোঁকের বসে বাণিজ্যিকভাবে কাউকে ফুল চাষে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ভান্ডারপাইকা গ্রামের আরেক ফুলচাষি আব্দুল আওয়াল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দশমিক ২৮ শতাংশ জমিতে গোলাপ ও জারবেরা ফুল চাষ করেছি। গত তিন বছর ধরে আমি ফুল চাষ করে ভালোই লাভবান হয়েছি। একদিন পরপর ফুল তুলে বগুড়ায় ফুলের বাজারে পাইকারি দোকানে বিক্রি করি।’

শাজাহানপুর উপজেলার খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে ফুলের চাষাবাদ দেখাশোনা করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাজাহানপুর উপজেলার খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে ফুলের চাষাবাদ দেখাশোনা করছেন এক কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ফুলের নার্সারি আগে থেকেই আছে। তবে পাঁচ বছর আগেও উল্লেখ করার মতো বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হয়নি। এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।’

এদিকে, বগুড়া শহরের পৌর পার্কের পাশে নিয়মিত ফুলের বড় বাজার বসে। প্রতিদিন স্বাভাবিক বিক্রির পাশাপাশি, বিভিন্ন দিবস ও উপলক্ষে এই বাজারে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়।

ফুল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলেন, জেলার চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করছে শাজাহানপুরের উৎপাদিত ফুল। অন্য উপজেলা এবং জেলা থেকে আসা ফুল সব মিলিয়ে বগুড়ার ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। আর অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে যশোর থেকে আসা ফুল।

বগুড়া ফুল বিক্রেতা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে মোট ১৭টি পাইকারি ফুলের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন পড়ে ১ লাখ ৭০ জাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। বিক্রি হওয়া ফুলের প্রায় ২০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় শাজাহানপুর উপজেলার উৎপাদিত ফুলে। বগুড়ার অন্য উপজেলা এবং আশপাশ থেকে আসা ফুল মিলে ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়। অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ পূরণ হয় যশোর থেকে আসা ফুলে। তিনি আরও বলেন, ‘শাজাহানপুরের উৎপাদিত ফুলের মান ভালো। এই উপজেলার মোট ফুলের মধ্যে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’

বগুড়া শহরের আপন ফুলঘরের ফুলবিক্রেতা মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফুলের বাজার নেমে গিয়েছিল। বিভিন্ন দিবসে আমাদের ফুলের অনেক চাহিদা হয়। সরকার না থাকায় এবং দিবসগুলো জাঁকজমক না হওয়ায় ফুল সেরকম বিক্রি হয়নি। গত ২২ জানুয়ারি থেকে ফুল বিক্রি আবারও বেড়েছে এবং ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

মেহেদি হাসান আরও বলেন, ‘চাহিদার শীর্ষে রয়েছে গোলাপ, বর্তমানে যার প্রতিটি খুচরা মূল্য ১০ থেকে ১৫ টাকা। এর পরেই রয়েছে রজনীগন্ধা, প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এর পরেই রয়েছে জারবেরা, প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। তারপরে রয়েছে চন্দ্রমল্লিকা, প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকায়। শাজাহানপুর উপজেলায় ফুল অনেক চাষ হচ্ছে। সেখানকার ফুলও আমরা বিক্রি করছি।’

শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমেনা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলায় মোট ১০ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। রোগবালাই-সংক্রান্ত সমস্যায় আমাদের কাছে এলে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত