Ajker Patrika

বিনে পয়সার পাঠশালা

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী) 
বিনে পয়সার পাঠশালা

একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি বেশিই যত্নবান তিনি। কেননা তাঁর বাবা মো. উমেদ আলী মোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

উমেদ আলী মারা যাওয়ার আগে চার প্রতিবন্ধী শিশুকে সাফল্যের সঙ্গেই প্রাথমিকের পাঠ দিয়ে যান। এরপর প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান যেন দায়িত্ব হয়ে পড়ে আশরাফুলের ঘাড়ে। তাই ২০১৬ সালে বাবার নামানুসারেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘উমেদ স্যার স্মরণিক প্রতিবন্ধী পাঠশালা’।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে অবস্থিত পাঠশালাটি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ঐচ্ছিক অনুদানে পরিচালিত পাঠশালার রয়েছে নিজস্ব ভবন।

এ ছাড়াও পাঠশালাটিতে বিনা বেতনে কাজ করছেন প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন। অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়েও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এ পাঠশালায় পড়াশোনা করছে ১৯২ জন ছাত্রছাত্রী। বিনে পয়সায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রণি পর্যন্ত পাঠ নেয় তারা।

এ পাঠশালা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা উমেদ আলী মোল্লা অবসরে যান ২০০৫ সালে। সে সময় তাঁর বিদ্যালয়ে চারজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ছিল। তিনি অবসরে যাওয়ার পর তারাও অনেকটা অবহেলিত হয়ে পড়ে। তাই বাবা ব্যক্তিগতভাবেই পরের বছর তাদের পাঠদানের দায়িত্ব নেন। কয়েক বছরের মধ্যে তারা সাফল্যের সঙ্গে সেই পাঠ শেষ করে। এর কিছুদিন পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে বাবা মারা যান। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বাবার এ ভালোবাসাকে ধরে রাখতেই তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করি উমেদ স্যার স্মরণিক প্রতিবন্ধী পাঠশালা।’

আবাসিকের ব্যবস্থা না থাকলেও শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য রয়েছে তিনটি লেগুনা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আশপাশের গ্রামগুলো থেকে তিনটি লেগুনায় শিশুদের পাঠশালায় আনা-নেওয়া করা হয়। সবচেয়ে দূরের শিক্ষার্থীর বাড়ি পাঠশালা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে।

কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই তারা পাঠশালায় পৌঁছে যায়। ১০টায় শুরু হয় পাঠদান। বেলা ২টায় ছুটি হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে খাবার দেওয়া হয়।

পাঠশালার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী রাব্বি হাসান বলে, ‘এখানে এসে পড়তে পারি, আবার খেলতেও পারি। দুপুরের খাবার খাই, আবার গাড়িতে করে বাড়িতেও যাই। তাই খুব ভালো লাগে।’

পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের আলোর পথ দেখাতেই তাঁদের এ প্রচেষ্টা। পাঠশালাটি পরিচালনার জন্য মাসে খরচের বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা ও বেলঘরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অর্ধ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় প্রতি মাসে। এই অর্থ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা হয়। আমার অনেক ছাত্রছাত্রী এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তাঁদের মধ্যে ১০-১২ জন প্রতি মাসে টাকা দেয়। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনও সহায়তা করে। অগ্রসর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠান বছরে হাজারত্রিশেক টাকা দেয়। সব মিলিয়ে সমাজের হৃদয়বানদের সহায়তায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত