Ajker Patrika

ভুয়া ভাউচারে টাকা উত্তোলন, দুই বছরেও লাগানো হয়নি বায়োমেট্রিক

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি
ভুয়া ভাউচারে টাকা উত্তোলন, দুই বছরেও লাগানো হয়নি বায়োমেট্রিক

সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ৭৩টি বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনার দুই বছর পার হলেও তিনটি বিদ্যালয় ছাড়া অন্য ৭০টি বিদ্যালয়ে এখনো স্থাপন করা হয়নি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। 

চারঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্লিপের বরাদ্দ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারা ওই অর্থবছরের স্লিপের বরাদ্দ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে হাজিরা মেশিন কিনে ভাউচার উপস্থাপন করেছে। স্লিপ বরাদ্দের কেনাকাটার সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিস সরাসরি জড়িত থাকে না। স্ব স্ব বিদ্যালয় নিজেরাই স্লিপের মালামাল ক্রয় করে থাকে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্লিপের ক্রয়-সংক্রান্ত আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে।  

ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা একাধিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার কথা ছিল কিন্তু কোন মেশিন কিনবে-এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বায়োমেট্রিক মেশিন কেনা হয়নি। বায়োমেট্রিক মেশিন না কিনে কীভাবে ভাউচার জমা হলো এবং তা পাস করানো হয়েছে-এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কেউ।  

অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকেরা জানেও না ডিজিটাল মেশিন ক্রয় করে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনা হলেও সেগুলো বর্তমানে সচল নেই। মেশিনগুলো আলমারিতে তালাবন্ধ অবস্থায় আছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পরে আরও দুটি অর্থবছর পেরিয়ে গেলেও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়নি। এমনকি বরাদ্দ ফেরতও দেওয়া হয়নি। অনেক প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন। বিষয়টি যে কারও কাছে অবশ্যই আত্মসাতের শামিল বলে মনে হবে।   

এদিকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর স্লিপের বরাদ্দের কেনাকাটায় স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। মালামাল না কিনে কীভাবে ভাউচার উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষা অফিসাররা কোন স্বার্থে এসব ভাউচার পাস করেন-তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এসব ভুয়া ভাউচার উপস্থাপন করে সরকারি টাকা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা।  

চারঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাজমুল হক বলেন, ভাউচার জমা দিয়ে বিদ্যালয়গুলো টাকা উত্তোলন করেছে এটা সঠিক। তবে কোন ধরনের বায়োমেট্রিক মেশিন কিনবে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আর মেশিন কিনতে পারেনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা। তবে মেশিন কেনার টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সরকারি কোনো টাকা উত্তোলনের পরে খরচ করতে জটিলতা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু দুই অর্থবছর পেরিয়ে গেলেও কেন ওই টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি ওই শিক্ষক নেতা। তবে টাকাটা লোপাট হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের। আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি কিছুদিন আগে। ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলনের পরেও যারা ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করেনি তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় সবাই মরেনি, একমাত্র জীবিত ১১ নম্বর সিটের যাত্রী

ইরানের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাব পড়েনি: আইএইএ

সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, সেনা জালে ৩ সমন্বয়ক

‘উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার সময় আমার ছেলে হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত