Ajker Patrika

সপ্তাহ ধরে থানায় জব্দ গরু, আদালতের আদেশের অপেক্ষায় মালিক

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯: ১৮
সপ্তাহ ধরে থানায় জব্দ গরু, আদালতের আদেশের অপেক্ষায় মালিক

জামালপুরের ইসলামপুর থানায় ছয় দিন ধরে দুটি গরু আটকে রাখা হয়েছে। মালিকানার পক্ষে প্রমাণ হাজির করেও গরু দুটি ছাড়িয়ে নিতে পারছেন না বকুল মিয়া নামের এক কৃষক। পুলিশ বলছে, আদালতের আদেশ ছাড়া তাঁকে গরু দেওয়া যাবে না।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে গরু দুটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। গরু দুটির মালিকানা দাবিদার কৃষক বকুল মিয়া উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর ছেলে।

বকুল মিয়া বলেন, গত ৫ মে পাশের নাপিতেরচর গো-হাট থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় একটি বাছুরসহ একটি গাভি কেনেন তিনি। গরু দুটি কেনার হাট ইজারাদারের রসিদও তাঁর কাছে রয়েছে। অর্থ সংকটে পড়ায় বাছুরটি রেখে পাশের মোহাম্মদপুর গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে গাভিটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

এদিকে উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের কান্দারচর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের দুদু শেখ থানায় অভিযোগ দেন, তাঁর চুরি হওয়া গরু মোহাম্মদপুর গ্রামে পাওয়া গেছে। এমন খবরের ভিত্তিতে ইসলামপুর থানার পুলিশ গিয়ে গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বকুল মিয়ার বিক্রীত গাভি ও তাঁর বাছুর জব্দ করে থানায় আটকে রাখে।

ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, চারটি গরু চুরি হওয়ায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন দুদু শেখ। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, চুরি হওয়া গরুগুলোর মধ্যে লাল-কালো রঙের একটি গাভিও ছিল। কিন্তু জিডির বর্ণনা অনুযায়ী জব্দ গরু দুটি দুদু শেখের নয় মর্মে প্রমাণ হয়। কিন্তু গরু দুটি বকুলকে বুঝিয়ে না দিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে গরুর প্রকৃত মালিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু কাগজপত্র আদালতে পাঠায় পুলিশ। বকুল মিয়া আদালতে গিয়ে আইনি জটিলতায় গরুর মালিকানা না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফেরেন। 

ভুক্তভোগী কৃষক বকুল মিয়া বলেন, ‘নিজের গরুর মালিক হয়েও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি না। প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার দূরে থানায় গিয়ে গরুর পরিচর্যা করতে হচ্ছে। তাতে সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের আদেশ পেলেই তারা আমাকে গরু ফেরত দেবে।’

এ বিষয়ে গোয়ালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমিসহ চরগোয়ালিনী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরনবী এবং গাইবান্ধা ইউপির চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী থানায় গিয়ে কাগজপত্র মিলিয়ে জানতে পারি, গরুর প্রকৃত মালিক বকুল মিয়া। পুলিশও বকুল মিয়াকে গরু-বাছুর বুঝিয়ে দিতে রাজি হয়। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে এখনো বকুল গরু-বাছুর বুঝে পাননি।’

চরগোয়ালিনী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরনবী বলেন, ‘জিডির বর্ণনা অনুযায়ী গরুর মালিক বকুল মিয়া।’ 

গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘আমরা তিনজন চেয়ারম্যান থানায় বসে পুলিশের উপস্থিতিতে গরুর প্রকৃত মালিক বকুলকে গরু ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হই। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গরুর মালিককে গরু বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পরে জানতে পেরেছি, গরু এখনো ফেরত দেয়নি পুলিশ।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকৃত মালিক যাতে গরু পায়, সে ব্যাপারে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আদালতের আদেশ মোতাবেক প্রকৃত মালিককে গরু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ 

এদিকে সংশ্লিষ্ট আদালতের মামলার নথি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) আব্দুর রাজ্জাকের বরাত দিয়ে ইসলামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আদালত থেকে গরুর মালিকানা বিষয়ে আদেশ থানায় পাঠানো হয়েছে। তবে সেই ডাক এখনো খোলা হয়নি। ডাক খুলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রকৃত মালিককে গরু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত