Ajker Patrika

রঙিন চালে ক্যানসার প্রতিরোধের সম্ভাবনা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
Thumbnail image
পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী রঙিন চালের পিঠা। ছবি: সংগৃহীত

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ রঙিন চাল চাষে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই চাল শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

গতকাল রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী ফকির। সঙ্গে ছিলেন তাঁর গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।

গবেষকেরা জানান, রঙিন চাল; বিশেষত লাল ও কালো রঙের চাল সাদা চালের তুলনায় পুষ্টিগুণে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কালো চালে জিংক ও আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো চালে অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ ১ হাজার ১২০ থেকে ৭ হাজার ০৩৫ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রায় নেই। কালো চালে প্রতি গ্রামে ফেনল কনটেন্ট ৭ থেকে ১০ মিলিগ্রাম এবং ফ্লাভোনয়েড কনটেন্ট ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, যা সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি।

গবেষকেরা বলেন, অ্যান্থোসায়ানিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও সহায়ক। এ ছাড়াও রঙিন চালে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, আঁশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

অধ্যাপক মো. ছোলায়মান আলী বলেন, রঙিন চাল চাষ সাধারণ ধানের মতোই সহজ। এটি আমন ও বোরো মৌসুমে চাষ করা যায় এবং দোআঁশ থেকে কাদামাটি পর্যন্ত সব ধরনের জমিতে ভালো ফলন দেয়। সঠিক পরিচর্যায় প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ‘সাদা চালের তুলনায় রঙিন চালের ফলন কিছুটা কম হলেও এর বাজারমূল্য অনেক বেশি। এটি খিচুড়ি, বিরিয়ানি, মুড়ি, চিড়া এবং পিঠা তৈরিতে উপযোগী হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে পাখি ও রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ায় উন্নত জাত উদ্ভাবন জরুরি।’

সহযোগী গবেষক অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন জানান, রঙিন চালের পুষ্টিগুণ মূলত বাইরের আবরণে থাকে। আধুনিক মিলে চাল ছাঁটাইয়ের সময় কিছু পুষ্টি উপাদান হারাতে পারে। তবে ঢেঁকিতে তৈরি করা চাল পুষ্টিগুণ প্রায় অক্ষুণ্ন রাখে।

ছোলায়মান আলী বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং চাষাবাদে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি প্রয়োগ করলে রঙিন চাল দেশের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এই গবেষণা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত