Ajker Patrika

জালিয়াতির মাধ্যমে একই পরিবারের তিনজন জুলাই যোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের পাতলাশী গ্রামের বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী স্বাস্থ্য কার্ড গ্রহণ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের পাতলাশী গ্রামের বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী স্বাস্থ্য কার্ড গ্রহণ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের পাতলাশী গ্রামের বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী, তাঁর স্ত্রী ও সন্তান জুলাই যোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্টের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনজনই আহত হন।

ওয়াজেদ আলী দাবি করেন, তিনি সামান্য আঘাত পান এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানও কিছুটা আহত হন। এরপর আবেদন করলে তাঁর স্ত্রী মোছাম্মত রুমি ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে এক লাখ টাকা সরকারি সহায়তা পান। পাশাপাশি ওয়াজেদ আলী ও তাঁর ছেলে অপূর্ব হিমেল রানা গত ২৪ জুলাই সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্বাস্থ্য কার্ড গ্রহণ করেন। বিতরণ অনুষ্ঠানে পরিবারের পক্ষ থেকে তিনটি স্বাস্থ্য কার্ড নেন ওয়াজেদ আলী।

তবে একই পরিবারের তিন সদস্যের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করছেন, জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁরা এই সুবিধা নিয়েছেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ওয়াজেদ আলী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমদের নিকটাত্মীয় এবং তাঁদের পরিবার ৫ আগস্টের আন্দোলনে অংশ নেয়নি।

বরং ওই দিন বিকেলে নিগুয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির আনন্দ মিছিলে হামলার অভিযোগ রয়েছে ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, পাতলাশী গ্রামের হিরন পালোয়ানকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন ওয়াজেদ। এরপর তাঁরা গণপিটুনির শিকার হয়ে পাশের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকায় পালিয়ে যান।

আহত হিরন পালোয়ান বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে ওয়াজেদ আলীসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। আমার বাঁ হাতের কবজিতে ছল (দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে আঘাত করলে আমি পড়ে যাই। আমার ছেলে চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে ওয়াজেদকে মারধর করে। সেই অস্ত্র এখনো আমাদের কাছে আছে।’

স্থানীয় বিএনপি নেতা ফরিদ খাঁ বলেন, ‘৫ আগস্ট ৩টার দিকে আনন্দ মিছিল থেকে ফেরার সময় ওয়াজেদ ও তাঁর লোকজন আমাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এখন তারাই “জুলাই যোদ্ধা” হয়ে গেছে।’

পাতলাশী গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, ‘ঘটনার সময় হইচই শুনে এগিয়ে এসে দেখি ওয়াজেদ ও তার লোকজন বিএনপির মিছিলে হামলা করছে। যিনি হামলা করেছে, সেই কীভাবে “জুলাই যোদ্ধা” হয়?’

এমন অভিযোগে অনেক এলাকাবাসী ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি জানতে গেলে ওয়াজেদ প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে স্থানীয়দের চাপে তিনি বলেন, ‘সেদিন দুপুরে মাওনায় মিছিলে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি হই। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি, আমার স্ত্রী ও সন্তানও আহত হয়েছে। এরপর আমরা আবেদন করি এবং স্বীকৃতি পাই।’

অভিযুক্ত ওয়াজেদ আলীর ছেলে অপূর্ব হিমেল রানা। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত ওয়াজেদ আলীর ছেলে অপূর্ব হিমেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর স্ত্রী মোছাম্মত রুমি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ছেলে অপূর্ব হিমেল জানান, ফেসবুকে ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয় দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ৫ আগস্ট বেলা ১১টায় মাওনায় গিয়ে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলায় আহত হন। তবে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো স্থানীয় নেতাকে চিনেন না এবং সেদিনের কোনো স্লোগান বা বক্তব্য তাঁর মনে নেই। তিনি বর্তমানে নিগুয়ারী ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ কলেজে অধ্যয়নরত।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসার কাগজপত্র জমা দিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান। তখন আমি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলাম না।’

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন নতুন করে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমীর সালমান রনি বলেন, ‘ওয়াজেদ আলীর বক্তব্য অসংগতিপূর্ণ মনে হওয়ায় বিষয়টি আবারও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত