Ajker Patrika

‘দুর্ঘটনার ভয়ে বাইক কিন্যা দেই নাই, বাপধন তো গুলিতে মরল’

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৫: ০৭
‘দুর্ঘটনার ভয়ে বাইক কিন্যা দেই নাই, বাপধন তো গুলিতে মরল’

‘বাপধনের শখ ছিল বাইক কিনব। দুর্ঘটনার ভয়ে আমরা কিন্যা দেই নাই। কিন্তু বাপধন তো গুলি খাইয়া মরল। আমার কলিজার টুকরা তো কোনো দল করত না, কোনো আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা আমার বাপেরে মারছে।’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন রাজধানীর মিরপুরে গত ১৯ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় গুলিতে নিহত আসিফুর রহমানের (১৭) মা ফজিলা খাতুন। 

আসিফের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে। আজ শুক্রবার সকালে কথা হলে তার স্বজনেরা জানান, ছয় ভাইবোনের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। অন্য ভাই-বোনদের নিয়ে তার মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আসিফের বাবা প্রায় ২০ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পাটের ব্যবসা করছেন। 

ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের আসিফ বছর খানেক ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। আগামী মাস থেকে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার কথা ছিল তার। কিন্তু গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে আসিফ গুলিবিদ্ধ হলে রাত ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। 

 ২০ জুলাই দুপুরে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া সামাজিক কবরস্থানে আসিফের মরদেহ দাফন করা হয়। তাকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা আমজাদ হোসেন ও মা ফজিলা খাতুন। আসিফের কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন অন্য স্বজনেরা। 

মোবাইল ফোনে আসিফের দুটি ছবি দেখাতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতি করত না। আমার সঙ্গেই ঢাকায় থাইকা একটা গার্মেন্টসে চাকরি করত। বাঁচবার লাইগা আমার বাপধন আমার কাছে কতই না আকুতি করছে। কিন্তু আমি তো বাঁচাইতে পারলাম না। মাথায় গুলি কইরা আমার পুলাডারে মারছে।’ 

ছবি দুটির একটিতে পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা পরে নৌকায় বসে আছে আসিফ। অন্য ছবিতে আসিফের নিথর দেহে মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন। আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওইদিন (১৯ জুলাই) জুম্মার নামাজ পইড়া একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাইয়া বাপ-পুলা ঘুমাইতে যাই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলাডা কইলো একটু বন্ধুর সঙ্গে দেখা কইরা আসি। কিন্তু সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ছেলে ফোন কইরা বলে-আব্বু তুমি তাড়াতাড়ি আসো, আমি অ্যাক্সিডেন্টে করছি। খবর পাইয়াই আমি দৌড়াইয়া যখন যাই তখনো গুলি চলতাছে। কিন্তু গিয়া তো দেখি আমার পুলার মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন লইয়া মিরপুরের আলোক হাসপাতালে পইড়া আছে।’ 

আসিফুর রহমান। ছবি: সংগৃহীতহাসপাতালের টিকিট দেখিয়ে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘অইখান (আলোক হাসপাতাল) থাইক্কা রিকশায় কইরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়া যাই। সেখানে মাথায় ব্যান্ডেজ কইরা আমার বাপধনরে নিউরোসাইন্স হাসপাতালে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল) নিতে বলে। রিকশায় কইরা যখন নিউরোসাইন্সে নিয়ে যাই তখন বাপে ব্যথায় কাতরাইয়া কইতাছিল-আমার ওপর থাইক্কা দাবি ছাইড়া দিয়ো আব্বা। আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করবার পাইলাম না। আমি আর বাঁচমু না। পরে নিউরোসাইন্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

আসিফের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ‘আসিফের শখ ছিল বাইক কিনব। দুর্ঘটনার ভয়ে আমরা কিন্যা দেই নাই। কিন্তু আমার বাপধন তো গুলি খাইয়া মরল। আমার কলিজার টুকরা তো কোনো দল করত না, কোনো আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা যারা আমার বাপেরে মারছে আল্লাগ তাগো বিচার কইর।’ 

আসিফের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নিউরোসাইন্স হাসপাতাল থেকে তিন হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে লাশ মিরপুরে আনা হয়। পরে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আসিফের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরেরদিন সকাল সাড়ে ৭টায় এসে পৌঁছায়। আসিফ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত