Ajker Patrika

নায়েবের ‘ঘুষ লেনদেন’ করেন অফিস সহায়ক ও তাঁর ভাতিজা

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪১
নায়েবের ‘ঘুষ লেনদেন’ করেন অফিস সহায়ক ও তাঁর ভাতিজা

একটি নামজারি খারিজের সরকারি ফি ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু ওই খারিজ সম্পন্ন করতে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে (নায়েব) ঘুষ দিতে হয় ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকারও বেশি। তবে ঘুষের টাকা নায়েব নিজের হাতে না নিয়ে তাঁর অফিস সহায়ক এবং তাঁর প্রতিবেশী এক ভাতিজার মাধ্যমে লেনদেন করেন। 

এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, যাতে অফিস সহায়কের পাশে একজনকে টাকা গুনতে দেখা যায়। ওই টাকা ঘুষ হিসাবে লেনদেন হচ্ছে—এমন অভিযোগ আমলে নিয়েছে প্রশাসন। 

এর মধ্যে ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরে নায়েবের বিরুদ্ধে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর গতকাল বুধবার স্থানীয় ১২৬ জন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সানোয়ার হোসেন কর্মরত আছেন প্রায় ছয় বছর যাবৎ। ভূমি অফিসের পাশেই তাঁর বাড়ি হওয়ায় অফিস চলাকালীন তিনি তাঁর বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই অবস্থায় বেশির ভাগ সময়েই ভূমি সেবাগ্রহীতারা অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পায় না। 

যে কারণে ফোনে অথবা সরাসরি নায়েবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর অফিস সহায়ক আহাম্মদ এবং প্রতিবেশী ভাতিজা হিরকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। হিরক ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কোনো কর্মচারী নন। তবে তিনি দিনভর অফিসেই থাকেন এবং নায়েবের ঘুষের লেনদেন করেন। হিরক এবং অফিস সহায়ক আহাম্মদ মিলে খারিজ প্রতি ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজারেরও ঊর্ধ্বে টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করেন। 

রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. উজ্জ্বল এবং মো. মাহফুজ নামে দুই ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি তাঁরা ২০ শতক জমির খারিজ করতে নায়েবের কাছে যান। পরে নায়েব তাঁদেরকে অফিস সহায়ক আহাম্মদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরপর খারিজ বাবদ আহাম্মদ তাঁদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করলে ১৮ হাজার টাকায় নির্ধারিত হয়। এরপর তাঁরা আহাম্মদকে প্রথমে ১৫ হাজার পরে আরও তিন হাজার টাকা দেন। 

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে আহাম্মদ ১৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার একপর্যায়ে অফিস সহায়ক আহাম্মদকে বলতে শোনা যায়, ‘টাকা হইছে হাতের ময়লা, আপনিতো মাত্র ১৫ হাজার দিছেন, আরও তিন হাজার দিবাইন; মস্তু নামের এক লোকের খারিজ করে দিছি সে ৪০ হাজার টাকা দিছে।’

টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে অফিস সহায়ক আহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ওই টাকা ধার হিসেবে নিয়েছি। পরে ফেরত দিয়ে দিব। খারিজের জন্য আমি কোনো টাকাপয়সা নেয়নি।’ 

নায়েবের ভাতিজা হিরক বলেন, ‘নায়েব আমার প্রতিবেশী চাচা হন। আমি ওই সুবাদে অফিসের কাজকাম করে দিই। কিন্তু কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন আমি করি না। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ 

রাজিবপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার অফিস সহায়ক এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, ভিডিওটা দেখে আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, এক লোক খাজনার চেক কাটতে বিকাশে টাকা দিতে পারছিল না। তাই সে অফিসে এসে হাতে দিয়ে গেছে। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে সবগুলোই মিথ্যা এবং বানোয়াট।’ 

এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টাকা নেওয়ার ভিডিওটি দেখে অফিস সহায়ককে তাৎক্ষণিক শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তা ছাড়া নায়েবের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে আসার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে নায়েব দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লজ্জায় ধর্ষণের শিকার মায়ের আত্মহত্যা: ৮ বছরের মেয়েটি যাবে কোথায়

এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে ‘স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত’, প্রধান শিক্ষকের দুই রকম বক্তব্য

বলিদান ও শয়তান পূজার বুদ্ধি দিল চ্যাটজিপিটি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহড়া শুরু, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত

বাংলাদেশ ব্যাংকে পোশাক নির্দেশনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিকের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত