Ajker Patrika

বিশৃঙ্খল মহাসড়কে বেপরোয়া গতির যানে যাচ্ছে প্রাণ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশ। মহাসড়ক দখল করেই চলছে বালুর ব্যবসা। বালু ওঠানো-নামানোর জন্য মহাসড়কের এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক। অবাধে চলছে অবৈধ থ্রি-হুইলার ও তিন চাকার যান।

রাস্তার যখন এই অবস্থা, তখন গাড়ি চলছে বেপরোয়া গতিতে। আছে ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগিতা। দুম করে পাশের ছোট রাস্তা থেকে মহাসড়কে উঠে পড়ছে গাড়ি।

সব মিলিয়ে ফলাফল মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা। এক বছরে এমন শতাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধশত মানুষের। আহত হয়েছে আরও অনেকে। কিন্তু এটা থামাতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা খলিল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সড়কে আমাদের স্বজনেরা মরছে আর প্রশাসন প্রতিবারই দুর্ঘটনার কারণ জানিয়েই তাদের দায় সারছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখি না। এটা খুবই দুঃখজনক।’

১৬ জুলাই দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালে কোর্ট ভবন এলাকায় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান জাহাঙ্গীর আলম, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না আক্তার ও তাদের শিশুসন্তান সানজিদা। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেট ফেটে সড়কে ভূমিষ্ঠ হয় এক নবজাতক। এ হৃদয়স্পর্শী ঘটনা সবাইকে নাড়া দেয়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। এতে সবার একটাই চাওয়া– সড়কে বন্ধ হোক মৃত্যুর মিছিল।

ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের জুন থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশে ১২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। আহতের সংখ্যা ৩১৭। এর মধ্যে পুরুষ ২২২, নারী ৮১ ও শিশুর সংখ্যা ১২। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত হয়ে যারা মারা যায়, সে হিসাব ফায়ার সার্ভিসের কাছে থাকে না। সেটা হিসাব করলে এ সংখ্যাটা দাঁড়াবে প্রায় অর্ধশত।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত তায়িব বলেন, ত্রিশালের এ অংশে মহাসড়ক দখল করেই চলছে বালু বিক্রির ব্যবসা। বালু ওঠানো-নামানো করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক। মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ থ্রি-হুইলার ও তিন চাকার যান। এ ধরনের অসংখ্য কারণ রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার। প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি না থাকলে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো সম্ভব নয়।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিনের মতে, বিশৃঙ্খল মহাসড়কে যানবাহনের অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ওভারলোড, ওভারটেকিং-প্রবণতা, গাড়ির চাকার মান ঠিক না থাকা, পাশের ছোট রাস্তার গাড়ি হুট করে মহাসড়কে উঠে পড়া—এসবই মূলত দুর্ঘটনার কারণ। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু সেটা মানছে না কেউ। অন্তত এটা না করতে পারলে দুর্ঘটনা কখনোই বন্ধ হবে না।’

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদির চৌধুরী মান্না বলেন, ‘ত্রিশালে মহাসড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যানবাহনগুলোর মধ্যে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা ও যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোর কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে।’

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইন উদ্দিন দাবি করেছেন, দুর্ঘটনা রোধে বেশ কয়েকবার বাস-ট্রাকের চালক ও শ্রমিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত