Ajker Patrika

বন্যা পরিস্থিতিতে বাড়তি মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৩: ০২
বন্যা পরিস্থিতিতে বাড়তি মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় একদিকে বন্যার পানি। আর অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে বোরো ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন কৃষকেরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছরের শ্রমিকের মজুরি বেশি। অঞ্চল ভেদে এ বছর একজন শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। দিনে একজন শ্রমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ জমির ধান কাটতে পারেন। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ায় শ্রমিক বেশি লাগছে। বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে না পারাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ২০ থেকে ২৫ মণ। এতে শ্রমিক লাগছে ১০ থেকে ১২ জন। প্রতিমণ ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হচ্ছে তা শ্রমিক সংকটের কারণে উঠে আসছে না। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় বোরো ধান চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এখনো প্রায় ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়নি। 

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু একদিকে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ধেয়ে আসছে বন্যার পানি। এই সংকটের মধ্যে দফায় দফায় বৃষ্টিতে পানি জমে পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার গাইবান্ধা, ইসলামপুর সদর, পার্থশী, নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, চরপুটিমারী, চরগোয়ালিনী এবং গোয়ালেরচর ইউনিয়নের কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। খেতে পাকা ধান কিন্তু শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না। নিচু খেতে বৃষ্টির পানি জমে ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। পার্থশী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যমুনা নদীর বন্যার পানি। ইউনিয়নের গামারিয়া এলাকার কমোড়বনে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক ধান খেত। 

গামারিয়া গ্রামের কৃষক ছইদুর মিয়া জানান, ইতিমধ্যে কমোড়বন এলাকায় আমার তিন বিঘা ধানের খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। 

ডেংগারগড় বানিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আমিনুর জানান, শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারিনি। গত দুই দিনে আমার চার বিঘা ধানের জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। 

নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের সোনামুখী গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, সপ্তাহখানেক আগেই ধান পেকেছ। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছি না। 

গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা গ্রামে কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, শ্রমিকের মজুরি যেমন বেশি। তেমন শ্রমিকের সংকটও চলছে। মাথাপিছু এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। 

গাইবান্ধা ইউনিয়নের কৃষক সুলতান আকন্দ বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ধান কাটার খরচও যোগ হবে। সব মিলিয়ে হিসেব করে দেখলে বোরো ধান লাগিয়ে লাভ হয় না।’ 

ধান কাটার শ্রমিক ফুইমুদ্দিন, হাসমত, শহিজল, আকবরসহ অনেকেই জানান, সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেশি। সে কারণেই ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি টাকায় শ্রম না বেচলে আমাদের সংসার কীভাবে চলবে। 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এল এম রেজওয়ান জানান, শ্রমিক সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় আগে যেসব খেতে ধান পাকা ছিল, তা কাটা হয়নি। এখন সব খেতের ধান একসঙ্গে কাটতে হচ্ছে। এ কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। 

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজপাঠক (বন্যার পানি পরিমাপক) আব্দুল মান্নান বলেন, যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে বন্যার পানি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত