Ajker Patrika

কৃষকের ‘উপকারে’ বিল খনন, নেপথ্যে কর্মকর্তাদের বালু–বাণিজ্য

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
কৃষকের ‘উপকারে’ বিল খনন, নেপথ্যে কর্মকর্তাদের বালু–বাণিজ্য

কৃষকের উপকারে আসবে—এ লক্ষ্যে নেত্রকোনার পূর্বধলায় ‘মরা গাং বিল’ নামের একটি বিল খনন করা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, এর আশপাশে নেই কৃষিজমি। বিল খননের নামে কোটি কোটি টাকার বালু ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। আর এই বালু তুলতে গিয়ে স্থানীয়দের বাড়িও ভেঙে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু বালু ব্যবসার জন্য এমন জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্প হাতে নিয়েছে পাউবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষিকাজে সেচ সুবিধার স্বার্থে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পাটলী গ্রামের সামনে এই মরা গাং বিল। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ডজনখানেক বাংলা ড্রেজার বসিয়ে পাটলী এলাকায় বিল খনন করা হচ্ছে। এতে বিলের পাড়ে বসবাসরত ৪০-৫০টি বাড়ির একাংশ ভেঙে গেছে। নলকূপ, টয়লেটসহ বাড়ির আঙিনা ধসে পড়েছে বিলে। ভাঙন-ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক শ ঘরবাড়ি। ড্রেজারের বিকট শব্দে গ্রামের কয়েক শ পরিবার অতিষ্ঠ। স্থানীয়রা জানান, বারবার অভিযোগ দিলেও কেউই শুনছেন না তাঁদের কথা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৯২ মিটার প্রস্থ এবং জায়গাভেদে ৩ মিটার ও ২ মিটার গভীরতায় ওই বিলটি খনন করার কথা। এ কাজের বরাদ্দ ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। টেন্ডারপ্রক্রিয়ায় কাজটি পায় চট্টগ্রামের ইউনি অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে নেয় নেত্রকোনা শহরের শাহীনুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

মূল লক্ষ্য বালু ব্যবসা
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বিল খননের কাজ শুরু হয়, ১৫ জুন শেষ হওয়ার কথা। তবে যথাসময় শেষ না হওয়ায় ছয় মাসের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু ব্যবসার লোভে কাজের অগ্রগতি কম দেখাচ্ছে পাউবো। বিল থেকে মোট ১ লাখ ১০ হাজার ঘনমিটার বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ৮-৯ লাখ ঘনমিটার বালু বিক্রি করেছে ঠিকাদার। তবে পাউবোর খাতায় সেই হিসাব কমে ১৮ হাজার ঘনমিটার মাত্র।

সরেজমিন দেখা যায়, মরা গাং বিলটি পাটলী গ্রামের নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়ক থেকে ৫০০ গজ ভেতরে। ওই বিল থেকে তোলা বালু সড়কের পাশে পাঁচটি বড় বড় ডাইকে (বালু জমানোর বিশাল গর্ত) বিশাল স্তূপে জমিয়ে রাখা হয়েছে। একের পর এক ট্রাকে লোড করা হচ্ছে বালু। প্রতি ট্রাক ৪-৫ হাজার টাকা দরে এসব বালু বিক্রি হচ্ছে।

পাটলী গ্রামের বিলপাড়ের বাসিন্দা আলকাছ মিয়া বলেন, ‘বিলের চারপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো কৃষিজমি নেই। তাহলে কার স্বার্থে এই বিলটি খনন করছে সরকার? বাড়িঘর তো ইতিমধ্যে অনেকগুলো বিলের গর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক ডজন শ্যালো মেশিনের শব্দে আমরা শ্রবণশক্তি হারাতে বসেছি। পোলাপানের পড়াশোনা শেষ। শব্দে তারা পড়তে পারে না। কতবার অভিযোগ দিয়েছি, কেউ শোনেননি আমাদের কথা।’

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ঘরবাড়ি বিলীন, শব্দদূষণে মানুষের ভোগান্তিসহ সবগুলো অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ঠিকাদার শাহীনুর ইসলাম বলেন, পাউবোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিলটি খনন করা হচ্ছে। বালু টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়েছে

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা সার্ভে করেছিলাম তখন বাড়িঘর ভাঙার কোনো তথ্য পাইনি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় সার্ভে করে দেখা হবে বাড়িঘর ভাঙলে তার ক্ষয়ক্ষতি ঠিকাদারকে বহন করতে হবে।’ তবে বালু ব্যবসার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। আশপাশে কৃষিজমি না থাকলেও কার স্বার্থে এই বিল খনন, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। তাঁর দাবি, খনন হলে বিলে পানি থাকবে, সেখান থেকে কৃষকেরা উপকৃত হবেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত