সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট)
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ১২ মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং অন্যতম বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দূরত্বে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা।
পরিবেশবিদ এবং আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, অতীতে খোদ সরকার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিল বলে তাঁরা নতুন ঘোষণার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছেন না। সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বনসংলগ্ন শিল্পকারখানাগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলছেন তাঁরা।
১৯৯৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ) ঘোষণা করে। এ এলাকার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা, বাগেরহাট জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলা, খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা। এসব স্থানে কলকারখানাসহ যেকোনো নির্মাণকাজ করার আগে বন ও বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নানা রকম শর্ত আরোপ করা হয়।
ইসিএ ঘোষণার পরও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় শিল্পায়ন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকে। ইসিএ ঘোষণার আগেই সেখানে ১৮৬টি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট সরকারের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ জাতীয় পরিবেশ কমিটি সুন্দরবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা মোট ৩২০টি শিল্পকারখানাকে কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ছিল আগের ১৮৬টি, নতুন করে স্থাপিত ১১৮টি শিল্পকারখানা ও প্রকল্প এবং অনুমতির আবেদন করা ১৬টি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চল ও এর সংলগ্ন এলাকা এবং মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। সরকারি নতুন নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন আগে ৭ মে মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট কারখানা, এলপিজি প্ল্যান্ট, তেল শোধনাগারসহ ২৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলোর সিমেন্ট কারখানা রয়েছে ৫টি আর এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে ৫টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মোংলা বন্দরের কাছ থেকে প্লট ইজারা নিয়েছে।
মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চলের বাইরে ৭টি এলপিজি প্ল্যান্টসহ আরও ৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পশুর নদের তীরের গ্রিন টাউন এলপিজি প্ল্যান্টটির অবস্থান সুন্দরবনের মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মোংলা ইপিজেডের ২৭৮টি প্লটের অধিকাংশই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে ৩৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনকাজ শুরু করেছে। মোংলা ইপিজেডের বর্তমানে চালু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়েটার, চুরুট, রাবার, পরচুলা, টাওয়েল, পলি ব্যাগ ও প্রিন্টিং জুট, তৈরি পোশাক, স্টিলের টিউব, বলপেন, টুথব্রাশসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা।
মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ হওয়া ২০৫ একর জায়গায় এখনো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
সুন্দরবনের ১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যেই মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল গ্রাম। এই গ্রামে খাদ্য অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে একটি সাইলো বা বড় খাদ্যগুদাম। জাহাজ নির্মাণ কারখানা করার জন্য এই গ্রামেই প্রায় ২০০ একর জমি কিনেছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তবে তিনি পরিবেশ ছাড়পত্র নিলেও কারখানাটি স্থাপন করেননি।
পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এ উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। কারণ বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, সরকারই উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকার মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছে।’
নূর আলম শেখ উল্লেখ করেন, সিমেন্ট ও এলপিজি প্ল্যান্ট দূষণের মাত্রার বিচারে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাল ক্যাটাগরির (অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ) অন্তর্ভুক্ত। এসব কারখানার দূষণের প্রভাবে সুন্দরবনসংলগ্ন নদী-খালে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পশুর নদের ইলিশ মাছের আকার ক্রমেই ছোট হচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের জলজ প্রাণিকুলও ক্ষতির সম্মুখীন।
সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন শিল্পকারখানার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। ড. ফরিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি এলপিজি প্ল্যান্টসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সুন্দরবনের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এমন কোনো শিল্প ইসিএ এলাকার মধ্যে করা যাবে না। যেগুলো ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নতুন করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব শিল্পকারখানা লাল ক্যাটাগরির, সেগুলো তিন ধরনের দূষণ তৈরি করে। প্রথমত, তারা বায়ুমণ্ডলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে। দ্বিতীয়ত, সিমেন্ট কারখানার ছাই বাতাসে উড়ে লোকালয় ও বনের মধ্যে ছড়ায়। তৃতীয়ত, কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নদী-খালের পানিতে ফেলা হয়। পানিতে মেশা বর্জ্য জোয়ার-ভাটার কারণে সুন্দরবনের মাটিতে ঠাঁই নেয়। এভাবে দূষণ মাটি, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে যায়।’
আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আরও বলেন, পানিতে রাসায়নিক বর্জ্য মেশার কারণে জলজ প্রাণীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। শুশুকসহ জলজ প্রাণীদের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মাছের সংখ্যাও কমে এসেছে। মাটিতে বীজ থেকে চারা গজানোর হারও আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। ধীরে ধীরে ঘটছে বলে খালি চোখে আমরা হয়তো এই ক্ষতির মাত্রা ধরতে পারি না। তবে ক্রমাগতভাবে এই দূষণ বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। সুন্দরবনের নদী-খালের দূষিত মাছ খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শিল্পকারখানাগুলোর আশপাশের বাসিন্দারা দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সুন্দরবনবিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন, যেসব কারখানা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জন্যে গুরুতর ক্ষতির কারণ সেগুলো পরীক্ষা করে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আর যেগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলেছেন, ‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ইসিএ এলাকায় নতুন কোনো শিল্পকারখানা বা প্রকল্প নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেজা ইতিমধ্যে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকে (পরিবেশ অনুকূল শিল্প) প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করেছে। সরকার ভিন্ন যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে বেজা অবশ্যই সে সিদ্ধান্ত বিবেচনা-পর্যালোচনায় নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সংশোধন-পরিবর্তন-পরিবর্ধন করবে।’
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ১২ মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং অন্যতম বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দূরত্বে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা।
পরিবেশবিদ এবং আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, অতীতে খোদ সরকার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিল বলে তাঁরা নতুন ঘোষণার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছেন না। সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বনসংলগ্ন শিল্পকারখানাগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলছেন তাঁরা।
১৯৯৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ) ঘোষণা করে। এ এলাকার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা, বাগেরহাট জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলা, খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা। এসব স্থানে কলকারখানাসহ যেকোনো নির্মাণকাজ করার আগে বন ও বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নানা রকম শর্ত আরোপ করা হয়।
ইসিএ ঘোষণার পরও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় শিল্পায়ন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকে। ইসিএ ঘোষণার আগেই সেখানে ১৮৬টি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট সরকারের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ জাতীয় পরিবেশ কমিটি সুন্দরবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা মোট ৩২০টি শিল্পকারখানাকে কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ছিল আগের ১৮৬টি, নতুন করে স্থাপিত ১১৮টি শিল্পকারখানা ও প্রকল্প এবং অনুমতির আবেদন করা ১৬টি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চল ও এর সংলগ্ন এলাকা এবং মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। সরকারি নতুন নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন আগে ৭ মে মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট কারখানা, এলপিজি প্ল্যান্ট, তেল শোধনাগারসহ ২৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলোর সিমেন্ট কারখানা রয়েছে ৫টি আর এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে ৫টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মোংলা বন্দরের কাছ থেকে প্লট ইজারা নিয়েছে।
মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চলের বাইরে ৭টি এলপিজি প্ল্যান্টসহ আরও ৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পশুর নদের তীরের গ্রিন টাউন এলপিজি প্ল্যান্টটির অবস্থান সুন্দরবনের মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মোংলা ইপিজেডের ২৭৮টি প্লটের অধিকাংশই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে ৩৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনকাজ শুরু করেছে। মোংলা ইপিজেডের বর্তমানে চালু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়েটার, চুরুট, রাবার, পরচুলা, টাওয়েল, পলি ব্যাগ ও প্রিন্টিং জুট, তৈরি পোশাক, স্টিলের টিউব, বলপেন, টুথব্রাশসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা।
মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ হওয়া ২০৫ একর জায়গায় এখনো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
সুন্দরবনের ১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যেই মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল গ্রাম। এই গ্রামে খাদ্য অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে একটি সাইলো বা বড় খাদ্যগুদাম। জাহাজ নির্মাণ কারখানা করার জন্য এই গ্রামেই প্রায় ২০০ একর জমি কিনেছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তবে তিনি পরিবেশ ছাড়পত্র নিলেও কারখানাটি স্থাপন করেননি।
পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এ উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। কারণ বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, সরকারই উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসিএ এলাকার মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছে।’
নূর আলম শেখ উল্লেখ করেন, সিমেন্ট ও এলপিজি প্ল্যান্ট দূষণের মাত্রার বিচারে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাল ক্যাটাগরির (অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ) অন্তর্ভুক্ত। এসব কারখানার দূষণের প্রভাবে সুন্দরবনসংলগ্ন নদী-খালে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পশুর নদের ইলিশ মাছের আকার ক্রমেই ছোট হচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের জলজ প্রাণিকুলও ক্ষতির সম্মুখীন।
সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন শিল্পকারখানার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। ড. ফরিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি এলপিজি প্ল্যান্টসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সুন্দরবনের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এমন কোনো শিল্প ইসিএ এলাকার মধ্যে করা যাবে না। যেগুলো ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নতুন করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব শিল্পকারখানা লাল ক্যাটাগরির, সেগুলো তিন ধরনের দূষণ তৈরি করে। প্রথমত, তারা বায়ুমণ্ডলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে। দ্বিতীয়ত, সিমেন্ট কারখানার ছাই বাতাসে উড়ে লোকালয় ও বনের মধ্যে ছড়ায়। তৃতীয়ত, কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নদী-খালের পানিতে ফেলা হয়। পানিতে মেশা বর্জ্য জোয়ার-ভাটার কারণে সুন্দরবনের মাটিতে ঠাঁই নেয়। এভাবে দূষণ মাটি, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে যায়।’
আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী আরও বলেন, পানিতে রাসায়নিক বর্জ্য মেশার কারণে জলজ প্রাণীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। শুশুকসহ জলজ প্রাণীদের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মাছের সংখ্যাও কমে এসেছে। মাটিতে বীজ থেকে চারা গজানোর হারও আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। ধীরে ধীরে ঘটছে বলে খালি চোখে আমরা হয়তো এই ক্ষতির মাত্রা ধরতে পারি না। তবে ক্রমাগতভাবে এই দূষণ বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। সুন্দরবনের নদী-খালের দূষিত মাছ খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শিল্পকারখানাগুলোর আশপাশের বাসিন্দারা দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সুন্দরবনবিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন, যেসব কারখানা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জন্যে গুরুতর ক্ষতির কারণ সেগুলো পরীক্ষা করে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আর যেগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলেছেন, ‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ইসিএ এলাকায় নতুন কোনো শিল্পকারখানা বা প্রকল্প নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেজা ইতিমধ্যে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকে (পরিবেশ অনুকূল শিল্প) প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করেছে। সরকার ভিন্ন যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে বেজা অবশ্যই সে সিদ্ধান্ত বিবেচনা-পর্যালোচনায় নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সংশোধন-পরিবর্তন-পরিবর্ধন করবে।’
গত ৮ জুলাই দুপুরে ওই শিশুটি বাড়ির পাশে বসে খেলা করছিল। এ সময় ওই কিশোর অটোভ্যানে চড়িয়ে বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে তাকে নিয়ে যায়। পরে তাকে পাশের কুমারখালী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এরপর তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করে পুনরায় তার খেলার স্থানে রেখে যায়।
২২ মিনিট আগে২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ৯৯ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। সেতুটির দক্ষিণ পাশে সংযোগ সড়ক থাকলেও উত্তর পাশে এখনো পাকা রাস্তা নির্মাণ হয়নি। বরং উত্তর পাশের সংযোগ সড়কের বালু সরে গিয়ে সেখানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা, ঠিকভাবে...
২৬ মিনিট আগেপেট্রোল পাম্প, দুর্গাবাড়ী ও পঞ্চসার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আর মানিকপুর ১০ তলা ভবন এলাকা থেকে সুপার মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে গর্তে পানি জমে গিয়ে চলাচল হয়ে পড়েছে দুঃসাধ্য। সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দেখা গেছে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল...
১ ঘণ্টা আগেবাঁশের তৈরি কাঁচা বেড়ার গায়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন মকবুল হোসেন। দৃষ্টি ছেলে আবু সাঈদের সমাধিস্থলের দিকে। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম সমাধিস্থলের অদূরেই পুরোনো মাটির ঘরে বসে আছেন। হাতে সাঈদের পরনের শেষ কালো টি-শার্ট। কথা বলার জন্য এগিয়ে যেতেই কেঁদে উঠলেন মনোয়ারা বেগম।
৬ ঘণ্টা আগে