Ajker Patrika

৮ বছর ধরে সেলিমের শিকলে বাঁধা জীবন

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০৩
৮ বছর ধরে সেলিমের শিকলে বাঁধা জীবন

হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে আট বছর ধরে পায়ে ও হাতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তাঁর পরিবার। এভাবেই চলে তাঁর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ। শিকলে বাঁধা এই তরুণের নাম সেলিম মিয়া (২৩)। 

নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বীরবাগাইর গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে সেলিম। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, সেলিম মিয়া ২০১৫ সালের দিকে ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিছুদিন পরেই ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসেন। কয়েক মাস পর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। সবার সঙ্গে কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দেন। কাউকে চিনতে পারেন না। না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। একপর্যায়ে মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে একাধিকবার হারিয়ে গেলে পরিবার তাঁকে খুঁজে বের করে। 

তাই আর যাতে হারিয়ে না যেতে পারেন, সে জন্য প্রতিবন্ধী সেলিমের পায়ে ও হাতে লোহার শিকল পরিয়ে গাছে ও বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সেলিমকে খাবার মুখে তুলে খাওয়ান তার মা জরিনা আক্তার। এদিকে দরিদ্র পরিবারটি অর্থের অভাবে সেলিমের চিকিৎসাও করাতে পারছে না।

সেলিমের মা জরিনা আক্তার বলেন, ‘ছেলেডারে দিন-রাত শিকলে বাইন্ধা রাখি। এই অবস্থায় তার খাওয়া, ঘুম সবই হয়। ছেলেডার এই কষ্ট দেখতে আর সহ্য হয় না। কলিজায় আঘাত লাগে।’

সেলিমের বাবা জালাল মিয়া বলেন, ‘আট বছর ধইরা ছেলেরে শিকলে বাইন্ধা রাখছি। কী করাম গরিব মানুষ, টেহাপয়সা নাই। চিকিৎসা করাইতারি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই।’ 

সেলিমের চাচাতো ভাই মামুন মিয়া বলেন, গত আট বছর ধরে সেলিম কারও সঙ্গে কথা বলেন না। কেউ এলে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। শিকল খুলে দিলে অন্যত্র চলে যান। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাদির বলেন, শুনেছি ছেলেটি ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে মানসিক সমস্যায় পড়েছিল। তারপর বাড়িতে এসে পুরোপুরি মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান সেলিম। তাঁর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় খারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসনাত ভূঁইয়া মিন্টু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’ 

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত