Ajker Patrika

দেওয়ানগঞ্জে ৫ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধীরা

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬: ৩৫
Thumbnail image

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে নিয়মিতই ভাতা পেয়ে আসছিলেন প্রতিবন্ধীরা। হঠাৎ করে গত ৫ মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু সুবিধাভোগীর ভাতা। ৫ মাস আগেও তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরের নগদ অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা আসলেও, বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাননি ভুক্তভোগীরা।

প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগী পঞ্চাশ বছর বয়সী নারী জহুরা হাসিনা। বিশ বছর আগে ডান পায়ের মাংসে পচন ধরায় সেটি কেটে ফেলতে হয়। সেই থেকে প্রতিবন্ধিতা যোগ হয় তার জীবনে। পরে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়েকে নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি সুযোগ–সুবিধা ও মেয়ের টিউশনি করানো টাকায় চলে তাদের সংসার। 

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পোল্যাকান্দি গ্রামের জহুরা হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধির। এ সময় তিনি জানান, প্রায় ছয় মাস থেকে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২ হাজার ২৫০ টাকা মোবাইলের নগদে পেয়েছেন তিনি। এরপর গত জুন মাস থেকে ওই মোবাইল নম্বরে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাননি। উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে জানানো হয় নিয়মিতই প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা যাচ্ছে জহুরা হাসিনার মোবাইল নম্বরের নগদ অ্যাকাউন্টে।

জহুরা হাসিনার মতো ঝালোরচর এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রভাকর শীল, পোল্যাকান্দি গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দুলালীসহ অনেক সুবিধাভোগী এমন পরিস্থিতির স্বীকার। অসহায় এসব মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম ভোগান্তিতে দিন যাপন করছেন। 

ঝালোরচরের শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রভাকর শীল জানান, জুন মাস থেকে তিনি ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। এর আগে ঠিকমতো পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সমাজ সেবা অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। অফিস থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে তার ভাতার টাকা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। তবে যে নম্বরে ভাতার টাকা দেওয়া হয় সে মোবাইল নম্বর তার দেওয়া নয়। নম্বরটি অন্যজনের। 

উপজেলার পোল্যাকান্দি গ্রামের প্রতিবন্ধী জহুরা বেগম বলেন, বিগত বছর তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতার ৬ হাজার ৭৫০ টাকা অন্য নম্বরে চলে যায়। পরে সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে নম্বর পরিবর্তন করে দেন তিনি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিবর্তনকৃত নম্বরে টাকা পান। হঠাৎ করে আবারও তাঁর নম্বরে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। 

পোল্যাকান্দি গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কাবিল মিয়ার মা দুলালী জানান, গত জুন থেকে তাঁর ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। সমাজ সেবা অফিস বলছে নিয়মিতই টাকা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সমাজসেবা অফিসে তার নামের সাথে তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরের মিল নেই। 

উপজেলা সমাজ সেবা অফিস বলছে, এ উপজেলায় ২ হাজার ৯১৯ জন প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীকে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এবং ৭৩৫ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের সবার মোবাইল ফোনে নগদের মাধ্যমে ভাতার টাকা নিয়মিত যাচ্ছে। কেবল যারা অন্যের নম্বর ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। 

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জয় কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা না পাওয়ার ঘটনায় আমি নিজেও দুঃখিত। এ সমস্যা নিয়ে আমার অফিসে ১০–১৫ জন প্রতিবন্ধী যোগাযোগ করেছেন। আশা করছি জানুয়ারি থেকে যেকোনো ভাতার বেলায় এমন হবে না। সমস্যা নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত