Ajker Patrika

সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, খড় স্তূপ করলেন স্থানীয় বাসিন্দা

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ১৯: ২৩
সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ, খড় স্তূপ করলেন স্থানীয় বাসিন্দা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার পাঁচ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। নির্মাণকাজ না চলায় স্থানীয় এক বাসিন্দা সেতুর দুই পিলারের মাঝখানে সংযোগ সড়কে খড় স্তূপ করে রেখেছেন।

সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নে কুত্তামারা এলাকায় হরেখালী খালের ওপর। নির্মাণকাজ শুরু করার সময় লোহার অস্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। 

উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের কুত্তামারা গ্রামের হরেখালী খালের লোহার সেতু পার হয়ে গয়রাকুড়া, ঘোড়ামারা, দিকপাড়া, পোড়াবাড়ী, ধান্নাবাড়ী ও বাথুরকান্দা এলাকার লোকজনকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় হরেখালী খালের ওপর ৭২ মিটার আয়তনের সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণকাজ পায় মেসার্স আকরাম কনস্ট্রাকশন নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০২০ সালের ৩০ জুলাই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এলজিইডি। 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নে কুত্তামারা এলাকায় নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকাআজ শুক্রবার সকালে নির্মাণাধীন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খালে পানি নেই। মাঠ দিয়ে অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন। খালের দুই পাশে সংযোগ সড়কে দুটি করে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এর একপাশের সংযোগ সড়কে খড় স্তূপ করে রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। এ ছাড়া খালের মধ্যেও দুটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। এসব পিলারের রড বের হয়ে আছে। 

অপর দিকে নির্মাণাধীন সেতুর পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত লোহার সেতু দিয়ে অটোরিকশা ও ভ্যান চলাচল করছে। অটোরিকশায় করে সেতুতে উঠলে বোঝা যায় এটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। লোহার সেতুর বিভিন্ন স্থানে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে বলে সরেজমিন জানা গেছে। 

স্থানীয় লোকজন জানান, তাঁরা বর্ষার সময়ে নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করেন। তাই তাঁরা অনেক দিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় তাঁরা খুশি হলেও দুই বছর ধরে বন্ধ আছে।

কুত্তামারা গ্রামের সেতু এলাকার বাসিন্দা শরাফত আলী বলেন, ‘কাম ফালাইয়া ঠিকাদার চইলা গেছে। তাই সেতুর মুখে খড় শুকাইয়া জমাইয়া রাখছি। সেতু দিয়া তো পার হইবার উপায় নাই। অন্তত খড় রাইখা কাজে লাগাইতাছি।’ 

উপজেলার গয়রাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই খাল পার হয়ে পাঁচ গ্রামের ছাত্রছাত্রী বাথুয়ারকান্দা উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। যদি এই সেতুর কাজ ঠিক সময়ে শেষ হতো, তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের অনেক সুবিধা হতো।’ 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নে কুত্তামারা এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর পাশে লোহার সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকাপাঁচ গ্রামের মানুষ কৃষিপণ্য নিয়ে লোহার সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে পার হন বলে জানান যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছে। এখন নির্মাণাধীন সেতুটি আমাদের গলার কাঁটা হয়ে আছে।’ 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাব-ঠিকাদার মো. আবদুল মোমেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন সেতুর পাটাতন করতে হবে। আশা করছি দ্রুত সময়ে সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।’ 

এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী রাকিবুল আলম বলেন, ‘সেতু নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৪ মাসের। কিন্তু ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে দ্রুত কাজ শেষ করবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত