Ajker Patrika

পালিয়েছিল জামালপুরের ৩ ছাত্রী, জানা গেল কারণ

জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামপুর থেকে ফিরে
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৩১
পালিয়েছিল জামালপুরের ৩ ছাত্রী, জানা গেল কারণ

মাদ্রাসার জানালার নেট কেটে পালিয়েছিলেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার নিখোঁজ হওয়া তিন ছাত্রী। এ ঘটনায় মানব পাচার বা জঙ্গিবাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

আজ শনিবার সকালে মাদ্রাসার ওই তিন ছাত্রীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে আদালত। এর আগে গতকাল শুক্রবার তাদের রাজধানী থেকে উদ্ধার করে সকাল ৯টায় ইসলামপুর থানায় নিয়ে আসা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ তিনজনই মেয়েশিশু এবং জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতাকে মুখ্য বিবেচনায় রেখে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু উদ্ধার হওয়া তিন শিশুর ভাষ্য অনুযায়ী নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে মাদ্রাসাটির গ্রেপ্তারকৃত চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাচার বা জঙ্গিবাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। 

তিনি জানান, পুলিশের তদন্তে মাদ্রাসার পরিচালক মো. আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর এক হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসার শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রীরা তাদেরকে সন্দেহ করে। এ নিয়ে ভয় পেয়ে ৩ ছাত্রী গত রোববার রাতে কৌশলে মাদ্রাসার জানালার নেট কেটে পালিয়ে যায়। আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দিতে তিন শিক্ষার্থীকে এসব কথা বলে। 

উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নে বাংলা বাজার সভুকুড়া এলাকায় দারুত তাক্বওয়া মহিলা মাদ্রাসাসংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত রোববার ওই মাদ্রাসার তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পেয়ে ইসলামপুর থানা–পুলিশ তাদের উদ্ধারে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে ইসলামপুর পুলিশ কল্যাণ মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে ওই তিন ছাত্রীকে ইসলামপুর রেলস্টেশনের দিতে যেতে দেখা যায়। তারা ট্রেনে ঢাকায় যেতে পারে সন্দেহ হয় পুলিশের। ওই ফুটেজের সূত্র ধরে সহকারী পুলিশ সুপার মো. সুমন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ কমলাপুর রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে। সেখানে ওই তিন ছাত্রীকে স্টেশন থেকে বের হতে দেখা যায়। পরে সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্টেশনের রাজা মিয়া (১৪) নামের এক রিকশাচালক ওই তিন ছাত্রী সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেন। রাজা মিয়া ওই তিন ছাত্রীকে স্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে তাঁদের কাছে জানতে চায় তারা কোথায় যাবে। তখন ওই তিন ছাত্রী তাকে জানায়, তাদের বাবা-মা বেঁচে নেই। তারা ঢাকায় কাজ করবে বলে বাড়ি থেকে না বলে পালিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রাজা মিয়া তাদেরকে রাজধানীর মুগদার মান্ডা বস্তিতে পনেরো’শ টাকায় একটি ঘরভাড়া করে দেন। তিন শিশুর মধ্যে দুজনকে স্থানীয় এক পোশাক কারখানায় কাজও নিয়ে দেন রাজা মিয়া। 

পুলিশ সুপার জানান, রাজা মিয়া তিন শিশুর কোনো ক্ষতি করেননি। তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছে তিনি। রাজা মিয়ার তথ্যমতে গত বৃহস্পতিবার রাতে মান্ডা বস্তি থেকে ওই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করে করা হয়। তিন ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলায় জেলা কারাগারে আটক ওই মাদ্রাসার পরিচালক মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

এর আগে গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম সেতুর পূর্বপাড়ে বাংলা বাজার সভুকুড়া এলাকায় দারুত তাক্বওয়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় ওই তিন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় মাদ্রাসার পরিচালক আসাদুজ্জামান ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ মাদ্রাসার চার শিক্ষককে আটক করে। গত বৃহস্পতিবার আটককৃত চার শিক্ষকের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে মানবপাচার আইনে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানি ধার্য করে তাঁদের জেল হাজতে পাঠান। 

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবাসিক মাদ্রাসা থেকে তিন ছাত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। তাঁদের মাদ্রাসাটি সরকারি অনুমোদনও নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ইতি মধ্যে মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলার ধারা বদল করে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাসহ অন্যান্য আরও অভিযোগে মামলাটি চলমান থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

৪ দিন পর সন্তান ফিরে পেয়ে তিন ছাত্রীর স্বজনদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এক শিক্ষর্থীর মা রুপালী বেগম বলেন, ‘আল্লাহ আমার মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আদরের সন্তানকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি।’ সূর্যবানুর বাবা সুরুজ্জামান বলেন, ‘৪ দিন আমার বাড়িতে কেউ ঘুমাইনি। চুলাই আগুন জ্বলেনি। রাত দিন পাগলরে মতো ছুটে বেরিয়েছি মেয়েকে পেতে। প্রতিবন্ধ স্ত্রী মেয়ের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। মেয়েকে ফিরে পেয়েছি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’ নিখোঁজ মিম এর নানা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে নিখোঁজে আমার বাড়িতে শোক বইছিল। পাগলের মতো ছুটেছি। পুলিশ মিমকে মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদের মতো পুলিশও রাতদিন পরিশ্রম করেছে। 

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার মাদ্রাসা বাংলা বাজার সভুকুড়া এলাকায় দারুত তাক্বওয়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো, উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরদারপাড়া গ্রামের মাফেজ শেখের মেয়ে মীম আক্তার (৯), গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভুকুড়া মোল্লাপাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে মনিরা (১১) এবং সভুকুড়া গ্রামের সুরুজ্জামানের মেয়ে সূর্যবানু (১০)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

নাম প্রস্তাবে আটকে আছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’

মোহাম্মদপুরে আলোকচিত্রী ও জিগাতলায় শিক্ষার্থী খুন

ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট, পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত