Ajker Patrika

৩ সন্তানের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন, এবার নিজেই এসএসসি পাস করতে চান কালাম

ফরিদ আহম্মেদ রুবেল, শ্রীবরদী (শেরপুর)
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ০৮
৩ সন্তানের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন, এবার নিজেই এসএসসি পাস করতে চান কালাম

ছোটবেলায় বাড়িতে ঘটে অগ্নিকাণ্ড। সেখানে পুড়ে যায় বইখাতাসহ বাড়ির সবকিছু। পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ায় পড়াশোনা ছেড়ে নেমে পড়েন কাজে। দেশ-বিদেশে কাজ করে তিন সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে অসমাপ্ত এসএসসি পাস করতে চান ৬৭ বয়সী আবুল কালাম আজাদ।

শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া গ্রামে আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। পড়াশোনার জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীবরদী উপজেলার পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। স্কুলজীবনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর পারিবারিক সংকটের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলে শামসুদ্দীন মৌলভীবাজারের একটি মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক। মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বৃদ্ধ বয়সে পড়াশোনা করার বিষয় নিয়ে কথা হয় আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে তাঁর বইখাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তাঁর পরিবার। অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে। পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তাঁর।

এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। সেখানেই করেন বিয়ে। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাসজীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি।’

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই আমি ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হই। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হই। এখন চলছে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে। পাস করলে এসএসসি পাসের সনদ পাব।’

৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহে মুগ্ধ স্থানীয় তরুণেরা। শামছুল হক (২৭) নামের স্থানীয় এক তরুণ বলেন, ‘অনেকে তরুণ বয়সেই পড়ালেখা করতে চান না। আর কামাল চাচা বৃদ্ধ বয়সেও পড়ালেখা করছেন। তিনি আদর্শবান শিক্ষানুরাগী। তাঁকে দেখে অন্যরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবেন।’

লঙ্গলপাড়া গ্রামের আ. জব্বার (৮৫) বলেন, ‘কালাম ছোট থেকে অনেক কষ্ট করেছে। বাড়ি পোড়ার পর ঢাকা গিয়েছে। আবার বিদেশ গিয়েছে। তবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছে। শুনতাছি এবার সে নিজেই এসএসসি পরীক্ষা দিবে। আল্লাহ তার মনের আশা পূরণ করুক।’

এ বিষয়ে আবুল কালামের মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এখন আমরা তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ করছি। বাবার যতটুকু পড়তে মন চায়, আমরা তাঁকে সমর্থন দেব।’

খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, সশিক্ষিত আবুল কালাম বেশি পড়ালেখা না করেও কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। এখন তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এতে এলাকাবাসী খুব খুশি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

বাহাত্তরের সংবিধান, জুলাই সনদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে আইন উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত