Ajker Patrika

বাঁধের মাটি দিয়েই চলছে বাঁধ নির্মাণ!

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
বাঁধের মাটি দিয়েই চলছে বাঁধ নির্মাণ!

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় কার্যাদেশ বহির্ভূতভাবে চলছে বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণের কাজ। বাঁধ এলাকা থেকে মাটি কেটে বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যমুনা নদীর ভাঙন থেকে মুক্তির আশার বিপরীতে ভাঙনের আশঙ্কায় ভুগছেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যার দুর্যোগ মোকাবিলায় যমুনার বামতীর সংরক্ষণ পাইলিং বাঁধ এলাকার পশ্চিম বামনা মামুন ডাক্তারের বাড়ি থেকে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়া পর্যন্ত বাঁধ কাম রাস্তা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

প্রকল্পের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস ছালামকে। বাঁধের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করতে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে বারবার নিষেধ করা হলেও প্রকল্পের সভাপতি তা আমলে নিচ্ছেন না। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নে ওই বাঁধ কাম রাস্তা প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান এমপি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণে নির্মিত পাইলিং বাঁধের সন্নিকটে চুক্তিভিত্তিক ভেকু বসিয়ে মাটি কেটে মাহেন্দ্রতে করে বাঁধ কাম রাস্তা প্রকল্পে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের খবরে প্রথমে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পাইলিং বাঁধ দেবে যেতে পারে। ফলে আমরা বন্যা ও ভাঙন আশঙ্কায় রয়েছি।’ 

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ব্যয় কমিয়ে সরকারি অর্থ পকেটে ভরতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম কার্যাদেশ বহির্ভূতভাবে বাঁধ এলাকায় ভেকু বসিয়ে মাহেন্দ্র দিয়ে বাঁধ কাম রাস্তায় মাটি ভরাট করছেন। এতে বাঁধ এলাকা থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হলে যমুনা নদীর পানি বাড়তে না বাড়তেই বাঁধে ভাঙন দেখা দেবে। 

বাঁধ এলাকার দিনমজুর আশরাফ, হেলাল, নাজমা, ফুলমাল বেগম ও আকবর আলী বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম সরকারি অর্থ পকেটে ভর্তি করতেই বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে যাচ্ছেন।’ 

প্রকল্পের সভাপতি চিনাডুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, বাঁধ এলাকা থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে ঠিকই। তবে পরবর্তীতে যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বাঁধ এলাকার গর্তগুলো ভরাট করে দেওয়া হবে। 

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে কুলকান্দি থেকে গুঠাইল ঘাট পর্যন্ত ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ পাইলিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে বাঁধটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। 

প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, বাঁধের সন্নিকট থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। যা কার্যাদেশ বহির্ভূত। তা ছাড়া বাঁধ এলাকা থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাঁধ টেকসই হবে না। কিন্তু প্রকল্পের সভাপতি তা তোয়াক্কা করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

বাঁধ নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে ঠিকই। তবে যেখানে থেকে মাটি কেটে গর্ত করা হচ্ছে, তা বালু দিয়ে আবার ভরাট করাও হচ্ছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু বলেন, কোনোক্রমেই বাঁধের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করে প্রকল্পে দেওয়া ঠিক হবে না। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করা হলে বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণ বাঁধ কাম পাইলিংয়ের সীমানা থেকে অন্তত ৪০০ মিটারের মধ্যে মাটি বা বালু উত্তোলন করা ঠিক হবে না। তবে এ হিসাব বাঁধের একেক স্থানে একেক রকম। মোট কথা আগে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারপর বাঁধ কাম রাস্তা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত