Ajker Patrika

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা: মামলা বেড়ে ১৩, মোট আসামি ১৫৫৮৪

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৫০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ৫ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ নিয়ে এনসিপির সমাবেশে হামলা, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে এবং হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা হলো।

সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ১৬ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান সর্বশেষ মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় অন্যতম আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নীতীশ রায় প্রমুখ।

মামলার বর্ণনা থেকে জানা গেছে, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশস্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।

এর আগে, গত ২৬ জুলাই নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।

ওই ঘটনায় চার যুবক নিহতের বিষয়ে গত ১৯ জুলাই রাতে পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা করে। এসব মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি এবং জেলা কারাগারে হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়। অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় দুটি, কোটালীপাড়া থানায় একটি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পাঁচ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়। পর দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন বিকেলে শহরের ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়।

এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। গত ২০ জুলাই কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। এখন গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। সব রুটে যানবাহন চলাচল করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত