Ajker Patrika

ইসলামপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হাজারো বাড়িঘর, আহত শতাধিক

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ২২: ৩৬
Thumbnail image

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে অন্তত ২ হাজার ঘরবাড়ি। এ সময় শিশুসহ আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। উপড়ে গেছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। ঝড়ে ধান, ভুট্টাসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি অফিস। 

উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ১০টার দিকে। এতে উপজেলার গাইবান্ধা, পাথর্শী, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, পলবান্ধা, ইসলামপুর সদর ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

ঝড়ে গুরুতর আহতরা হলেন গাইবান্ধা ইউনিয়নের গংগাপাড়া গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে বিজয় (১৫), মেয়ে মোছা. ঋতু (৮), ডেঙ্গু শেখের ছেলে মেছের আলী (৫৬), ফুলবাসার বেগম (৭০) এবং শরবত আলীর এক বছর বয়সী ছেলে আবদুল হালিম। শিশু আবদুল হালিমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের ওপর পড়ে যাওয়া গাছ কেউ অপসারণ করছেন। কেউ আবার ঘরের উড়ে যাওয়া টিন কুড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভাঙা ঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেকেই ঘরের চাল খোঁজে পাচ্ছেন না। 

ইসলামপুরের পাথর্শ্বী ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড এক মাদ্রাসা।গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতের চর, পোড়ারচর, গংগাপাড়া গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নাপিতের চর বলিদাপাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম কালা মানিক বলেন, ‘আমার জীবনেও এ রকম ঝড় দেখিনি। মুহূর্তের মধ্যেই আমার দুটি ঘর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘরের চালে গাছ ও বাঁশের ঝাড় উপড়ে পড়ে। এতে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’ 

গংগাপাড়া গ্রামের মিজান মিয়া বলেন, ‘আমার দোচালা টিনের ঘর উড়ে গেছে। খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ পৌরশহরের দক্ষিণ কিংজাল্লা গ্রামের আকলিমা বেগম বলেন, ‘কোনো রকম বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বেঁচে গেছি। বাচ্চা খাচ্চা নিয়ে না খেয়ে আছি।’ 

একই এলাকার আবু হাসেম দুদু মিয়া বলেন, ‘ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হলে আমার ঘরের ওপর ৩টি গাছ উপড়ে যায়। ঘরের ভেতরে আমিসহ পরিবারের ৫ সদস্য আটকা পড়ে যাই। পরে মোবাইল ফোনে আমার বড় ছেলেকে জানালে, সে এসে আমাদের উদ্ধার করে। এতে আমার নাতি দুজনই আহত হলে একজনকে সাতটি ও নাতনিকে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।’ 

ঢেংগারগর নুরুল হুদা আলিম মাদ্রাসার টিনশেড ঘরে ভেঙে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পাথর্শী ইউনিয়নের পশ্চিম ঢেংগারঘর গ্রামের সুজন শেখ বলেন, ‘ঝড়ে মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু লন্ডভন্ড করে ফেলে। আমার বাড়িতে বসবাস করার মতো ঘর নেই। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’ 

জামালপুরের ইসলামপুরের গাইবান্ধা ইউনিয়নের গংগাপাড়া এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড বাড়িঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা পৌর মেয়র আবদুল কাদের শেখ বলেন, ‘অন্তত ৬০০ পরিবারের বসতবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েছে।’ পাথর্শ্বী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবলু বলেন, ‘ঝড়ে আমাদের ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আজিজ আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ে আহত হওয়া ২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও গুরুতর আহত অবস্থায় ৬ জনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো করা হয়েছে।’ 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দুর্যোগ ত্রাণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে পৌর শহরসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত