Ajker Patrika

জামালপুর পৌরসভা

পানি-বিদ্যুৎহীন উপহারের ঘর এখন গলার কাঁটা

  • অনেকে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর এক দিনের জন্যও আসেননি।
  • নির্মিত ১৮০টি ঘরে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
  • রাস্তা না থাকায় মেয়েটাও স্কুলে যেতে পারে না: উপকারভোগী
  • তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব: ইউএনও
জামালপুর প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৩৩
জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরে নির্মিত উপহারের ঘর। এসব ঘরে মিলছে না কোনো নাগরিক সুবিধা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরে নির্মিত উপহারের ঘর। এসব ঘরে মিলছে না কোনো নাগরিক সুবিধা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে উপহার হিসেবে ঘর দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে তাঁর দেওয়া সেই ঘর এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরের উপকারভোগীদের কাছে। শত আশা নিয়ে সেই ঘরে উঠলেও এখন মিলছে না পানি ও বিদ্যুৎ। নেই রাস্তাঘাটও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপহারের সেই সব ঘরে অধিকাংশ উপকারভোগী থাকছেন না। অনেকেই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর এক দিনের জন্যও আসেননি। আর যাঁরা থাকছেন, তাঁরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাওভাঙ্গা চরে ৩ একর ৪০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ১৮০টি ঘরে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথম দফায় উপহারের প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। সর্বশেষ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ঘরপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ। আর যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের সমস্যা যাতায়াতের রাস্তা। প্রায় ২ কিলোমিটার নদের চরের কাদামাটি পেরিয়ে সেখানে যেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শাকসবজি, হাঁস-মুরগি পালনের কোনো জায়গাও রাখা হয়নি।

শিল্পী বেগম নামে একজন বলেন, ‘ফৌজদারিতে থাকতাম। সকালে শহরে উঠে কাজ করতাম। মেয়েটাকে লেখাপড়া করাতাম। জোর করে বসতভিটা ভেঙে এখানে পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনু এ কাজে সহায়তা করেছেন। এখন খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকি। চরের মধ্যে থেকে শহরের যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। এই জন্য কাজকর্মও পাই না। রাস্তা না থাকায় মেয়েটাও স্কুলে যেতে পারে না।’

উপকারভোগী তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘এই ঘর দেওয়ার সময় বলেছিল, আমাদের সাহায্য-সহায়তা করা হবে। কই, এখন তো কাউকে দেখি না। কেউ খুঁজ নিতেও আসে না।’

সুমি বেগম বলেন, ‘পানি নাই, রাস্তা নাই, বিদ্যুৎ নাই। সন্ধ্যা হলেই এক দিকে যেমন পৃথিবী অন্ধকার হয়। এখানে আমাদের জীবনও অন্ধকার হয়ে যায়। কোথাও বের হবার উপায় নাই। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দিতে নিব তার কোনো সুযোগ নাই। দুই মাইল হেঁটে পাথালিয়ার ছাতির মোড়ে রিকশা আনতে গেলে আরেক রিকশা না যাওয়ার জন্য বলে।’

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহীদ জান্নাত পিংকি বলেন, ‘পরিদর্শনে গিয়ে মোটামুটি ৭ শতাংশ মানুষ পেয়েছি। কয়েকটি ঘর খালি ছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, এরা বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন। যেহেতু আমি দিনের বেলায় গিয়েছিলাম। যাঁরা থাকেন না; তার মানে হচ্ছে এই ঘরে থাকার যোগ্যতা তাঁর ছিল না। এমনি এমনি নিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি ঘরে কার থাকার কথা, কে বরাদ্দ নিয়েছেন, সেই ব্যক্তি থাকছেন কি না, কেন থাকছেন না, তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত