Ajker Patrika

সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াল ডহর মশিয়াহাটীর আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ পরিবার

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ২২: ৩৭
ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েদাপাড়ার দুই নারী। পাড়াটির আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছে যশোর সেনাবাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েদাপাড়ার দুই নারী। পাড়াটির আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছে যশোর সেনাবাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘরের বারান্দায় চেয়ারে বসেছিলেন শিউলি বিশ্বাস। পরনে লাল আর কালো রঙের ফুল তোলা প্রিন্টের শাড়ি, দুই হাতে শাঁখা। কাছে যেতেই বারান্দা থেকে নেমে দাঁড়ান সিঁড়ির ওপর। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করতেই মৃদু হেসে বলতে লাগলেন, ‘প্রায় দুইটা মাস কত আতঙ্ক আর দুর্ভোগ-কষ্টে কেটেছে। অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। এখন অনেক ভালো আছি। সেনাবাহিনী পাশে দাঁড়িয়েছে। নতুন ঘর পেয়েছি, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র পেয়েছি। দেওয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নগদ টাকাও।’

শিউলি বিশ্বাস যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েদাপাড়ার বিষ্ণ বিশ্বাসের স্ত্রী। গত ২২ মে পাড়াটির ঘের ব্যবসায়ী পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে কৃষক দলের নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর রাতে একদল লোক পিল্টু বিশ্বাসের প্রতিবেশী ১৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ১৪টি বাড়িই পুড়ে ভস্ম হয়। তার আগে চলে লুটপাট, ভাঙচুর ও মারধর। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন। আতঙ্কিত লোকজন প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আশপাশের জঙ্গল, ঘেরের পাড়ে আশ্রয় নেন। ক্ষোভের এই হামলার ঝড় বয়ে গেছে শিউলি বিশ্বাসের জীবনে। সেই মতুয়াপল্লির বাসিন্দাদের মাঝে এখন আতঙ্ক কেটে ফিরছে স্বস্তি। সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুড়ে যাওয়া নিস্তব্ধ বাড়িগুলো নতুন করে জেগে উঠছে। ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছে নতুন পাকা বাড়ি। বাড়ির সঙ্গে পেয়েছে পুড়ে যাওয়া ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবও।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি পরিবারের মাঝে সংস্কার হওয়া বাড়িঘর হস্তান্তর ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম। এ সময় যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকীসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্তদের সংস্কার হওয়া বাড়িঘর পরিদর্শন করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনে পুড়ে ফেটে যাওয়া ভুক্তভোগীদের সেমিপাকা ঘরের দেয়াল নতুন করে করা হয়েছে প্লাস্টার। পুড়ে যাওয়া ছাউনির বদলে নতুন রঙিন টিন লাগানো হয়েছে। দেয়ালে করা হয়েছে রং। ঘরের ভেতরে পুড়ে যাওয়া ঘরের তৈজসপত্র, আসবাব, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যান লাগানো হয়েছে। আর এসব করে দিয়েছে যশোর সেনাবাহিনী। এই মানবিক উদ্যোগে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

পাড়াটির বাসিন্দা স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, ‘সব হারিয়ে ছিলাম। আড়াই মাস কত কষ্ট করেছি। বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখন সেনাবাহিনীর কল্যাণে নতুন ঘর পেলাম। আগের চেয়ে ভালো ঘর পেয়েছি। ঘরের ফ্যান, ফ্রিজসহ ঘরের ভেতরে যার যা পড়েছিল; তারা সেটা দিয়েছে। সেনাবাহিনী আমার পুনর্জীবন দিয়েছে।’ এখন আতঙ্ক কাটলেও মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীর টহলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডহর মশিয়াহাটীর একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিবর্গ ১৪টি পরিবারের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর আমি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিদর্শন করি। সেনাবাহিনীর প্রধানের নির্দেশ ছিলে এসব পরিবারকে সহযোগিতা করার। সেই লক্ষ্যে গত ১২ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত-পুনর্নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় আসবাব প্রদানের কাজ শেষ হয়। সেনাবাহিনী সব ভালো কাজের সঙ্গে সর্বদাই প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘যারা মানুষকে ক্ষতি করতে চায়, তাদের আমরা শক্ত হাতে প্রতিহত করব। আমরা কোনোভাবে আশা করি না, কোনো গোষ্ঠীকে বা মানুষকে কেউ নির্যাতন করবে বা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। দেশের সব নাগরিকের সবার সমান অধিকার। ফলে সবার নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের সরকার, আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করবে।’

প্রসঙ্গত, গেল ২২ মে অভয়নগর ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পাড়াটিতে হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিল যশোর জেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও তাদের খোঁজখবর আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

ট্রাকে করে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি ইসিতে জমা দিয়েও নিবন্ধন পেল না এনসিপি

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত