Ajker Patrika

নিজে গাড়ি চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০: ০০
নিজে গাড়ি চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত
নিজে গাড়ি চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত

যশোর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রবীণ গাড়িচালক ছিলেন হাবিবুর রহমান। দীর্ঘ ৪০ বছরের চাকরিজীবন শেষ করে গতকাল মঙ্গলবার তিনি অবসরে গেছেন। এদিন নিজে গাড়ি চালিয়ে তাঁরই চালককে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাহারুল ইসলাম। দুপুরে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা শেষে হাবিবুর রহমানকে বাড়ি পৌঁছে দেন তিনি।

এ সময় জেলা প্রশাসক ছিলেন চালকের আসনে আর গাড়ির ভেতরে প্রশাসক সাধারণত যে আসনে বসেন, সেখানে ছিলেন হাবিবুর রহমান। এদিকে একজন গাড়িচালকের বিদায়বেলায় এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় একদিকে জেলা প্রশাসক যেমন প্রশংসায় ভাসছেন, অন্যদিকে বিদায়বেলায় এভাবে সম্মানিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হাবিবুর ও তাঁর স্বজনেরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান ১৯৮৫ সাল থেকে যশোর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে যশোরের জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। হাবিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি যশোর শহরের মিশনপাড়া এলাকায়। ২০২২ সালে জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হন হাবিবুর রহমান।

এভাবে জেলা প্রশাসক সম্মানিত করবেন কখনো ভাবেননি হাবিবুর রহমান। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনাকে জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করি।’

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমি জেলা প্রশাসক স্যারদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। চাকরিজীবনের শেষ দিনে স্যার চালকের আসনে বসে নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেটা ডিসি স্যারকে দেখে সবার শেখা উচিত।’

নিজে গাড়ি চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত
নিজে গাড়ি চালিয়ে অবসরপ্রাপ্ত চালককে বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত

গাড়িচালক হাবিবুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘সততা ও নৈতিকতা প্রশ্নে আপসহীনতার যে দৃষ্টান্ত হাবিবুর স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। তিনি দীর্ঘ চাকরিজীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও চাকরিজীবনে হাবিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।’

সরকারি কর্মকর্তা যাঁদের গাড়ি রয়েছে, তাঁদের গাড়িপ্রতি মাসে ১৮০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকে। এই তেলের বেশির ভাগ চালকদের লুটপাটের অভিযোগ থাকে। জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক এই ১৮০ লিটারের বাইরেও বিভিন্ন অজুহাতে আরও সমপরিমাণ তেল নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু হাবিবুর রহমান দীর্ঘ চাকরিজীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার তথ্যমতে, হাবিবুর রহমান তাঁর বরাদ্দের তেলেই মাস শেষ করতেন। এ কারণে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই যশোরে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান গাড়িচালক হাবিবুর রহমান। শুদ্ধাচার পুরস্কার তোলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

এ বিষয়ে যশোরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে হাবিবুর রহমানের মতো সৎ মানুষ কমই দেখেছি। সাধারণ গাড়িচালকেরা তেল চুরি করাটাও পেশা হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন হাবিবুর রহমান। সরকারি গাড়িতে মাসে ১৮০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকে। তিনি যশোরের মতো একটি বড় জেলার জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক। ব্যস্ততম জেলা যশোরের ডিসি স্যারকে পুরো জেলায় চলাচল করতে হয়। অথচ তাঁর গাড়িতে যা তেল লাগে এটা অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য।’

কাজী সায়েমুজ্জামান আরও বলেন, ‘তিনি যতটুকু তেল লাগে ততটুকুই নেন। গতকাল হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে। শুনে মনটা কিছুটা খারাপ। সততার উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাঁর উদাহরণ টানি। গাড়িচালকদের ট্রেনিংয়ে সততার উদাহরণ দেখাতে হাবিবুর রহমানকে নিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি সরকারি গাড়িচালকদের সততার দৃষ্টান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত