Ajker Patrika

দশ গম্বুজ মসজিদটি মাটির নিচেই রয়ে গেল এক যুগ

কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
দশ গম্বুজ মসজিদটি মাটির নিচেই রয়ে গেল এক যুগ

খুলনার ফুলতলা উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থান পায়গ্রাম কসবা গ্রামের ভাটপাড়া খেয়াঘাটের। ভৈরব নদের এই খেয়াঘাটের পাশেই এক যুগ আগে সন্ধান মেলে সুলতানি আমলের হজরত খানজাহান আলী (রহ.) নির্মিত দশ গম্বুজ মসজিদের।

২০১১ সালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পরীক্ষামূলক খননকাজ করে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এই স্থাপনার সন্ধান পায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। কিন্তু পরে সংরক্ষণের কাজ আর এগোয়নি। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে মাটির নিচে চাপা পড়া ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোর ও খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ শতকে খানজাহান আলী বাগেরহাট ও খুলনায় দুটি শহর প্রতিষ্ঠা করে ওই অঞ্চল শাসন শুরু করেন। শাসনকালে অনেক মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেন তিনি। এই দশ গম্বুজ মসজিদও তাঁর তৈরি বলেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ওই স্থানে নতুন মসজিদ নির্মাণের সময় পুরোনো একটি স্থাপনা দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেখানে খননকাজ চালালে প্রাচীন মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। পুরো মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০ দশমিক ৫ ফুট, প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ ফুট।

খননের সময় পাওয়া ধ্বংসাবশেষ পর্যালোচনা করে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানান, দশ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি ষাট গম্বুজ মসজিদের অনুরূপ নকশা করে নির্মাণ করা হয়েছিল। মনে করা হয়, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মূল মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রাচীন মসজিদের ওপর একটি আধা পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খনন করা অংশটি সম্পূর্ণ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে স্থানটি এভাবেই পড়ে আছে। দীর্ঘ সময়েও এটি সংরক্ষণ বা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে পাশেই এলাকাবাসীর উদ্যোগে টিনশেডের একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

জোহরের নামাজ পড়তে আসা আমীর আলী (৯২) বলেন, ‘যেখানে স্থাপনাটি পাওয়া গেছে, সেখানে বেশ আগেই মাটির একটি ঢিবি ছিল। ওই ঢিবির ওপর একটি আধা পাকা মসজিদ ছিল হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর নামে। সেখানে বড় একটি কষ্টিপাথরও রাখা ছিল, যেটি পরে চুরি হয়ে যায়।’

আমীর আলী আরও জানান, ২০১১ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থানটি খনন করে যে স্থাপনা শনাক্ত করে, পরে সেটি মাটি চাপা দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চলে যান কর্মকর্তারা। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়সারা কাজ করে চলে গেছে। মসজিদটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে স্বাগত জানাব।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে ওই মসজিদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ওয়েবসাইট ঘেঁটে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলাম ফেরদাউস জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে মসজিদটির খননকাজ করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উন্মোচিত মসজিদটি সুলতানি স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। মসজিদটির নির্মাণকাল ১৫ শতক বলে মনে করা হয়। এটি ২০১৪ সালে পুরাকীর্তির তালিকায় গেজেটভুক্ত হয়।

জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, অদূর ভবিষ্যতে স্থাপত্যকীর্তিটির সংস্কারকাজ করা হবে। তবে পুরাকীর্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত