Ajker Patrika

জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালুর দায় স্বীকার করে বার্তা, এলাকায় আতঙ্ক

  • একই এলাকায় ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচ চরমপন্থী নেতাকে হত্যা
  • নিহত হানিফ হরিণাকুণ্ডু থানা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন
  • দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোনো ঘটনার সুরাহা না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড: পুলিশ
  • ঝিনাইদহের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে: স্বরাষ্ট্রসচিব

ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও মাগুরা প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণী শ্মশান খাল এলাকায় ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫ চরমপন্থী নেতাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণী শ্মশান খাল এলাকায় ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫ চরমপন্থী নেতাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিষিদ্ধ সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার হানিফ আলীসহ (৫৬) তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণী শ্মশানঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুজন হলেন হানিফের শ্যালক লিটন হোসেন (৩৬) ও তাঁর সহযোগী রাইসুল ইসলাম (২৮)। এদিকে হত্যার বিষয়ে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর পরিচয়ে কালু নামের একজন দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

আমিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গুলির শব্দ শুনে ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হননি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পর এলাকাবাসী একত্র হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ এবং দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর পুলিশকে খবর দেন।

নিহত হানিফ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে। তাঁর শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের উম্বাদ আলীর ছেলে লিটন ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল। শনিবার সকালে তাঁদের লাশ শনাক্ত করেন স্বজনেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা সবাই চরমপন্থী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হানিফ হরিণাকুণ্ডু থানা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। একটি মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমা নিয়ে ১৫ বছরের জেলজীবন শেষে এলাকায় ফেরেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হানিফ একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ফিরে আসার চেষ্টায় ছিলেন।

দায় স্বীকার করে বার্তা

জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুণ্ডু নিবাসী হানিফ তাঁর দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

যা বলছে পুলিশ

গতকাল দুপুরে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে বন্দুকধারীরা দুই সহযোগীসহ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফকে গুলি করে হত্যা করে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকার একটি ক্যানালের পাশ থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। নিহত হানিফ একাধিক হত্যা মামলার আসামি। হত্যার মোটিভ উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও সিআইডির কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুটি পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোনো ঘটনার সুরাহা না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে কালু নামের এক ব্যক্তির পরিচয়ে আসা খুদেবার্তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণী শ্মশান খাল এলাকায় ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫ চরমপন্থী নেতাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণী শ্মশান খাল এলাকায় ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫ চরমপন্থী নেতাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আলোচনায় ফাইভ মার্ডার

একই এলাকায় ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর দ্বন্দ্বের জেরে পাঁচ চরমপন্থী নেতাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করেন কালু। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের শহীদ খা, ত্রিবেণী গ্রামের নেওয়াজ শাহ, ফারুক, নুর খান ও কুষ্টিয়ার ভবানীপুর এলাকার শরিফুল ওরফে কটা। ওই মামলায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর কালুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

জনমনে আতঙ্ক

কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বর্তমানে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন কালু। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়ায় জেটি ইন্টারন্যাশনাল (জাপান টোব্যাকো) বাংলাদেশ লিমিটেডের মূল গেটের সামনে বোমা ও গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুর নিচে বালুর ঘাটের ম্যানেজারকে পায়ে গুলি করে ফিল্মি স্টাইলে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং খোকসার জিলাপীতলা ঘাটে আধিপত্য নিতে প্রায় ৪০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বালুর ঘাটের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সূত্রের দাবি প্রত্যেকটি ঘটনা চরমপন্থী নেতা কালুর নির্দেশেই ঘটেছে। তিনি জানান দিতে চাইছেন, সব জায়গায় তাঁর দলের লোক ছড়িয়ে আছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন জানান, এ ঘটনার পর তাঁরা আতঙ্কে আছেন। কখন জানি তাঁরা কালুর টার্গেটে পরিণত হন।

ঘটনার তদন্ত চলছে: স্বরাষ্ট্রসচিব

ট্রিপল মার্ডারে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দল জড়িত কি না, তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি। তিনি বলেন, ‘ঝিনাইদহের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অচিরেই সে রহস্য বের করা হবে।’ গতকাল যশোরে পিটিআই মিলনায়তনে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত