Ajker Patrika

৫০% নলকূপেই আর্সেনিক

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট) 
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২: ৩৩
ফকিরহাটে প্রায় ৫০ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিক শনাক্ত হয়েছে। ফলে সুপেয় পানির জন্য বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফকিরহাটে প্রায় ৫০ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিক শনাক্ত হয়েছে। ফলে সুপেয় পানির জন্য বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাটে মোট ২৮ হাজার ৪২৬টি নলকূপ। তবে আতঙ্কের বিষয় হলো, এগুলোর মধ্যে ১৩ হাজার ৯৭১টিতে আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শতকরা হিসাবে যা ৪৯ দশমিক ১৪ ভাগ। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক পরীক্ষায় এ তথ্য মেলে। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য প্রকাশ করে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, উপজেলার সদর, নলধা-মৌভোগ, বাহিরদিয়া-মানসা ও পিলজংগ ইউনিয়নে আর্সেনিক পরিস্থিতি গুরুতর। বিশেষত অগভীর নলকূপগুলোর পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি। ঘরবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নলকূপে অসহনীয় মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে। জার্মানি থেকে প্রাপ্ত উপকরণের মাধ্যমে এ পরীক্ষা করা হয়।

এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে এই উপজেলায় পানীয় জলে বেড়েছে লবণাক্ততা ও ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আরও জানায়, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চলে পরীক্ষা। গত সপ্তাহ পর্যন্ত চলেছে কিছু নলকূপে পুনঃপরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। আর বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত সহনশীল মাত্রা হলো প্রতি লিটার ৫০ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু ফকিরহাটের অনেক নলকূপে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০০ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে, যা ওই পরীক্ষা উপকরণের (কিড) সর্বোচ্চ মাত্রা!

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এসব নলকূপের পানি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নলকূপে লাল রং চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ফলে ওসব পরিবার পানীয় জলের সংকটে পড়েছে। বিকল্প পানির ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিকর জেনেও অনেক মানুষ এখনো সেই আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছে। এতে ৬০-৭০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকা হিসেবে নলকূপ, পুকুর ও নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এই সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে।

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী ফকিরহাটে ৪০ হাজার ৮৮৪টি খানা ও জনসংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ জন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর পানীয় জলের সংকট নিরসনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এবং এলাকার সচেতন মহল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই উপজেলায় ক্যানসার, চর্মরোগ, স্নায়বিক সমস্যা, যকৃৎ ও কিডনির জটিলতাজনিত অনেক রোগী রয়েছে। এসব রোগের সঙ্গে আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের সম্পর্ক রয়েছে। তাই রোগের পেছনে আর্সেনিকের কারণ আছে কি না, তা গবেষণা করে দেখা উচিত। আর্সেনিকে সরাসরি মৃত্যু না হলেও পরোক্ষ মৃত্যুর হার অনেক বেশি।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ছাব্বির হোসেন বলেন, ‘অসহনীয় মাত্রায় আর্সেনিক ফকিরহাটে পানীয় জলের সংকটকে তীব্র করেছে। সচ্ছল মানুষ পানি কিনে খাচ্ছে। কিন্তু কম আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়ছে। এ ছাড়া লবণাক্ততা ও পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির বিষয়ে স্বতন্ত্র জরিপ করা প্রয়োজন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আইরিন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেলিকপ্টারে নেওয়ার অবস্থায় নেই, দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে তামিম

অর্ধশতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ‘বিশেষ বৈঠক’, ব্যাখ্যা চাইল সদর দপ্তর

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, পালানোকালে আটক ৫ পুলিশ সদস্য

নতুন বাহিনীর প্রস্তাবে অসন্তোষ বেবিচকে

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বিরুদ্ধে ৪৭ ব্রিটিশ এমপিকে ‘সন্দেহজনক’ ই–মেইল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত