মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
মনিরুজ্জামান মনির শিক্ষা অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অথচ তাঁর বিলাসী জীবন। বর্তমান কর্মস্থল বাগেরহাট হলেও তাঁর ‘ঘুষের যোগাযোগ’ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায়। এমপিওভুক্তি, বদলি, গ্রেড পাইয়ে দেওয়া—সব কাজই তিনি করে দেন। এই ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় তিনি দুই স্ত্রী, স্বজনের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যত সম্পত্তি ঢাকায়
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় মনিরের কেনা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী মোসা. রিমা খাতুন। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ১ হাজার ৭৮০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের দাম কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে রিমার নামে রয়েছে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত (এফডিআর)।
ঢাকার কালশীতে বহুতল ভবন করছেন মনিরুজ্জামান মনির। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাউশির সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এই বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন মনির। নিজেই করেন সবকিছুর তদারকি। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ছদ্মবেশে যোগাযোগ করলে বাড়িটিতে মনিরের অংশীদারত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আব্বাস নামের কেয়ারটেকার।
গুঞ্জন রয়েছে, ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুনের বোনের মেয়ের নামে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন মনিরুজ্জামান মনির (৪৫)।
চুয়াডাঙ্গায় সম্পদের পাহাড়
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুসলিমপাড়ায় হোমিওপ্যাথি কলেজের পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মনিরের রয়েছে নিজস্ব একটি বাগানবাড়ি। এই বাগানবাড়িতে রাখা আছে একজন কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক)। স্থানীয়রা জানান, জমিসহ এ বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা। ওই জমির ১০ কাঠার মালিকানা প্রথম স্ত্রীর বাবার নামে। বাকি ৬ কাঠা মনিরের নিজের নামে আছে। এই বাগানবাড়ির দক্ষিণ পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে আরও দুটি প্লট। তার দামও অর্ধকোটির ওপরে। এই বাগানবাড়ির পূর্ব পাশে খানিকটা দূরে আছে আরেকটি বাড়িসহ প্লট। এই বাড়িসহ জমিরও আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা।
মনিরের ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে সহকারী হিসাবরক্ষক। চুয়াডাঙ্গা শহরের জোলের ধারে চারতলার বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। প্রায় ৭০ লাখ টাকা দামের ওই চারতলা বাড়িটি সোনিয়ার নামে। এই বাড়িটির পশ্চিম পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা প্রায় ১০ কাঠার একটি প্লট আছে। সেখানে তিনি সবজি চাষ করেন। শহরের বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় আছে ৫ কাঠার একটি বাগান। এই বাগানে কাঠ ও ফলের গাছ আছে। মুসলিমপাড়া মাজারের পাশেই আছে আরেকটি বাগান। শহরের নীলার মোড়েও রয়েছে ৫০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের জমি। এ ছাড়া নীলার মোড়ের পাশেই দুটি দোকানসহ আরেকটি প্লট আছে। সুমিরদিয়া মাঠে রাস্তার পাশেই রয়েছে ১০ কাঠার একটি বাগান। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে মুসলিমপাড়া ও নীলার মোড় এলাকার কয়েকজন বলেন, মনির মাঝেমধ্যে সম্পত্তির খোঁজখবর নিতে আসেন।
দর্শনার পুরোনো বাজারপাড়ায় ৫ কাঠা জমির ওপরে দুই ইউনিটের একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়ির আনুমানিক মূল্য অর্ধকোটি টাকা। দর্শনা পৌরসভায় ওই বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর মনিরুজ্জামান মনিরের নামেই।
‘কপাল খোলে’ মাউশিতে
২০০৫ সালে দর্শনা সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের (তৃতীয় শ্রেণি) চাকরি হয় মনিরের। পরে তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে বদলি হয়ে আসেন। এক-এগারোর সময় সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী সংস্কার হলে তিনি ঢাকা শিক্ষা ভবনে মাউশির প্রধান কার্যালয়ে স্কুল শাখায় বদলি হন। সেখান থেকেই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন বড় নেটওয়ার্ক।
মনির ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর শিক্ষা ভবনে মাউশির প্রধান কার্যালয়ে স্কুল শাখায় চাকরি করেছেন। তখন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা ভবন থেকেই হতো। ২০১৪ সালে তা বিকেন্দ্রীকরণ করে মাউশির ৯টি অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়। মনির সে সময় তাঁর নিজের বিভাগ খুলনা আঞ্চলিক অফিসে পদায়ন নেন। প্রথমে কুষ্টিয়া তারপর খুলনা উপপরিচালকের কার্যালয়ে বদলি হন মনির। খুলনা উপপরিচালকের কার্যালয়ে থাকাকালে মনির খুলনা বিভাগের ১০ জেলার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, বদলি ও গ্রেড পাইয়ে দেওয়ার তদবিরে জড়ান বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি ঢাকতে নানা কৌশল
অবৈধ আয় লুকাতে মনিরের কৌশলের শেষ নেই। সরোজগঞ্জে বাড়ি, দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় থাকেন বিদেশে। তিনি টাকা পাঠান মনিরের অ্যাকাউন্টে। নির্ধারিত দিনে আত্মীয়ের বাড়ির লোকজন টাকা তুলে নেন। আর মনির তদন্তে দেখান স্বজনের রেমিট্যান্সের আয়। নিজে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে স্বজনদের নামেও কিনেছেন সম্পত্তি। গোপনে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করছেন ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে।
বর্তমানে এই মনির বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসে হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক হিসেবে কর্মরত। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দুপুরেই বের হয়ে যান অফিস থেকে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে আসেন চুয়াডাঙ্গা শহরে। এরপর চলে তাঁর লেনদেনের দেখা-সাক্ষাৎ। রাত ৯টার পর বাগানবাড়িতে বসে ‘মদের আসর’। একা নন, ঘুষে সহযোগিতাকারীরাও থাকেন এই ফুর্তিতে—জানান এলাকার কয়েকজন।
বাগেরহাটে যাওয়ার আগে মনির ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালকের কার্যালয়ে। মনিরের পদ উচ্চমান সহকারী হলেও ক্যাশিয়ারগিরি তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। কর্মস্থলে তিনি রীতিমতো ‘ঘুষযন্ত্র’। ‘তাঁর বাঁ হাতে টাকা উঠলে ডান হাত নিমেষেই কাজ করে’—মন্তব্য একজন শিক্ষকের। আবার মনিরকে টাকা দিলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন শিক্ষক।
দুদকের জালে মনির
খুলনায় চাকরিকালে সপ্তাহের ছুটির দিন মনির বিভিন্ন জেলায় ঘুষ কালেকশনে বের হতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজ কৌশলে আটকে রেখে তিনি ঘুষ দাবি করতেন। সে সময় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষক মনিরের বিরুদ্ধে মাউশি ও দুদকে অভিযোগ করেছিলেন।
এই খুলনা অফিসে থাকাকালেই মনিরের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে মাউশি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সেই অভিযোগটিও খালাস করতে চেয়েছিলেন, তবে তিনি ব্যর্থ হন। বিষয়টি যায় দুদকের নজরে। দুদক এখনো তদন্ত কার্যক্রম চালু রেখেছে বলে জানা গেছে।
মাউশির খুলনা অঞ্চলের তৎকালীন উপপরিচালক এস এম আবদুল খালেক বলেন, ‘মনিরের কোথায় কী সম্পদ আছে, তা জানি না। মনির এতই ক্ষমতাবান, খুলনায় থাকাকালে সে আমাকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত।’
মনিরের বর্তমান কর্মস্থল বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের প্রধান তথা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমি শুনেছি মনিরের বিরুদ্ধে দুদকে একটি তদন্ত চলছে। তবে সেটার অগ্রগতির বিষয়ে জানি না। আমার এখানে আসার পর আমি নজরে রেখেছি। এখানে কোনো বাজে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে বাড়ি দূরে হওয়ায় সপ্তাহে বৃহস্পতিবার একটু আগে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনিরের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মনিরের দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি মেয়েমানুষ, এত কিছু জানি না। আর জানার চেষ্টাও করিনি। আমার স্বামীর নামে কোথায় কোথায় সম্পত্তি আছে, আমি জানি না। আপনারা সাংবাদিক, ভালো করে খোঁজ নিয়ে বের করেন।’
মনিরুজ্জামান মনির শিক্ষা অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অথচ তাঁর বিলাসী জীবন। বর্তমান কর্মস্থল বাগেরহাট হলেও তাঁর ‘ঘুষের যোগাযোগ’ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায়। এমপিওভুক্তি, বদলি, গ্রেড পাইয়ে দেওয়া—সব কাজই তিনি করে দেন। এই ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় তিনি দুই স্ত্রী, স্বজনের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যত সম্পত্তি ঢাকায়
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় মনিরের কেনা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী মোসা. রিমা খাতুন। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ১ হাজার ৭৮০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের দাম কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে রিমার নামে রয়েছে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত (এফডিআর)।
ঢাকার কালশীতে বহুতল ভবন করছেন মনিরুজ্জামান মনির। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাউশির সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এই বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন মনির। নিজেই করেন সবকিছুর তদারকি। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ছদ্মবেশে যোগাযোগ করলে বাড়িটিতে মনিরের অংশীদারত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আব্বাস নামের কেয়ারটেকার।
গুঞ্জন রয়েছে, ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুনের বোনের মেয়ের নামে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন মনিরুজ্জামান মনির (৪৫)।
চুয়াডাঙ্গায় সম্পদের পাহাড়
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুসলিমপাড়ায় হোমিওপ্যাথি কলেজের পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মনিরের রয়েছে নিজস্ব একটি বাগানবাড়ি। এই বাগানবাড়িতে রাখা আছে একজন কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক)। স্থানীয়রা জানান, জমিসহ এ বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা। ওই জমির ১০ কাঠার মালিকানা প্রথম স্ত্রীর বাবার নামে। বাকি ৬ কাঠা মনিরের নিজের নামে আছে। এই বাগানবাড়ির দক্ষিণ পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে আরও দুটি প্লট। তার দামও অর্ধকোটির ওপরে। এই বাগানবাড়ির পূর্ব পাশে খানিকটা দূরে আছে আরেকটি বাড়িসহ প্লট। এই বাড়িসহ জমিরও আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা।
মনিরের ছোট স্ত্রী সোনিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে সহকারী হিসাবরক্ষক। চুয়াডাঙ্গা শহরের জোলের ধারে চারতলার বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। প্রায় ৭০ লাখ টাকা দামের ওই চারতলা বাড়িটি সোনিয়ার নামে। এই বাড়িটির পশ্চিম পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা প্রায় ১০ কাঠার একটি প্লট আছে। সেখানে তিনি সবজি চাষ করেন। শহরের বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় আছে ৫ কাঠার একটি বাগান। এই বাগানে কাঠ ও ফলের গাছ আছে। মুসলিমপাড়া মাজারের পাশেই আছে আরেকটি বাগান। শহরের নীলার মোড়েও রয়েছে ৫০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের জমি। এ ছাড়া নীলার মোড়ের পাশেই দুটি দোকানসহ আরেকটি প্লট আছে। সুমিরদিয়া মাঠে রাস্তার পাশেই রয়েছে ১০ কাঠার একটি বাগান। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে মুসলিমপাড়া ও নীলার মোড় এলাকার কয়েকজন বলেন, মনির মাঝেমধ্যে সম্পত্তির খোঁজখবর নিতে আসেন।
দর্শনার পুরোনো বাজারপাড়ায় ৫ কাঠা জমির ওপরে দুই ইউনিটের একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়ির আনুমানিক মূল্য অর্ধকোটি টাকা। দর্শনা পৌরসভায় ওই বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর মনিরুজ্জামান মনিরের নামেই।
‘কপাল খোলে’ মাউশিতে
২০০৫ সালে দর্শনা সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের (তৃতীয় শ্রেণি) চাকরি হয় মনিরের। পরে তিনি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে বদলি হয়ে আসেন। এক-এগারোর সময় সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী সংস্কার হলে তিনি ঢাকা শিক্ষা ভবনে মাউশির প্রধান কার্যালয়ে স্কুল শাখায় বদলি হন। সেখান থেকেই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন বড় নেটওয়ার্ক।
মনির ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর শিক্ষা ভবনে মাউশির প্রধান কার্যালয়ে স্কুল শাখায় চাকরি করেছেন। তখন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা ভবন থেকেই হতো। ২০১৪ সালে তা বিকেন্দ্রীকরণ করে মাউশির ৯টি অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়। মনির সে সময় তাঁর নিজের বিভাগ খুলনা আঞ্চলিক অফিসে পদায়ন নেন। প্রথমে কুষ্টিয়া তারপর খুলনা উপপরিচালকের কার্যালয়ে বদলি হন মনির। খুলনা উপপরিচালকের কার্যালয়ে থাকাকালে মনির খুলনা বিভাগের ১০ জেলার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, বদলি ও গ্রেড পাইয়ে দেওয়ার তদবিরে জড়ান বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি ঢাকতে নানা কৌশল
অবৈধ আয় লুকাতে মনিরের কৌশলের শেষ নেই। সরোজগঞ্জে বাড়ি, দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় থাকেন বিদেশে। তিনি টাকা পাঠান মনিরের অ্যাকাউন্টে। নির্ধারিত দিনে আত্মীয়ের বাড়ির লোকজন টাকা তুলে নেন। আর মনির তদন্তে দেখান স্বজনের রেমিট্যান্সের আয়। নিজে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে স্বজনদের নামেও কিনেছেন সম্পত্তি। গোপনে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করছেন ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে।
বর্তমানে এই মনির বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসে হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক হিসেবে কর্মরত। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দুপুরেই বের হয়ে যান অফিস থেকে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে আসেন চুয়াডাঙ্গা শহরে। এরপর চলে তাঁর লেনদেনের দেখা-সাক্ষাৎ। রাত ৯টার পর বাগানবাড়িতে বসে ‘মদের আসর’। একা নন, ঘুষে সহযোগিতাকারীরাও থাকেন এই ফুর্তিতে—জানান এলাকার কয়েকজন।
বাগেরহাটে যাওয়ার আগে মনির ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালকের কার্যালয়ে। মনিরের পদ উচ্চমান সহকারী হলেও ক্যাশিয়ারগিরি তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। কর্মস্থলে তিনি রীতিমতো ‘ঘুষযন্ত্র’। ‘তাঁর বাঁ হাতে টাকা উঠলে ডান হাত নিমেষেই কাজ করে’—মন্তব্য একজন শিক্ষকের। আবার মনিরকে টাকা দিলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন শিক্ষক।
দুদকের জালে মনির
খুলনায় চাকরিকালে সপ্তাহের ছুটির দিন মনির বিভিন্ন জেলায় ঘুষ কালেকশনে বের হতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজ কৌশলে আটকে রেখে তিনি ঘুষ দাবি করতেন। সে সময় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষক মনিরের বিরুদ্ধে মাউশি ও দুদকে অভিযোগ করেছিলেন।
এই খুলনা অফিসে থাকাকালেই মনিরের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে মাউশি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সেই অভিযোগটিও খালাস করতে চেয়েছিলেন, তবে তিনি ব্যর্থ হন। বিষয়টি যায় দুদকের নজরে। দুদক এখনো তদন্ত কার্যক্রম চালু রেখেছে বলে জানা গেছে।
মাউশির খুলনা অঞ্চলের তৎকালীন উপপরিচালক এস এম আবদুল খালেক বলেন, ‘মনিরের কোথায় কী সম্পদ আছে, তা জানি না। মনির এতই ক্ষমতাবান, খুলনায় থাকাকালে সে আমাকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত।’
মনিরের বর্তমান কর্মস্থল বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের প্রধান তথা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমি শুনেছি মনিরের বিরুদ্ধে দুদকে একটি তদন্ত চলছে। তবে সেটার অগ্রগতির বিষয়ে জানি না। আমার এখানে আসার পর আমি নজরে রেখেছি। এখানে কোনো বাজে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে বাড়ি দূরে হওয়ায় সপ্তাহে বৃহস্পতিবার একটু আগে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনিরের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মনিরের দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি মেয়েমানুষ, এত কিছু জানি না। আর জানার চেষ্টাও করিনি। আমার স্বামীর নামে কোথায় কোথায় সম্পত্তি আছে, আমি জানি না। আপনারা সাংবাদিক, ভালো করে খোঁজ নিয়ে বের করেন।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পাঁচ বছর বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে তার মায়ের সহকর্মী এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী। উপজেলার জামালপুর চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
৩ মিনিট আগেঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনকে অস্ত্র মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড প্রদানসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ বিকেলে ঝালকাঠি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
১১ মিনিট আগেদুই ভাইয়ের বিবাদ মীমাংসার জন্য আলোচনায় বসেছিলেন ভগ্নিপতি। কিন্তু তাঁদের বিবাদ তো মিটলই না, উল্টো বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে বড় ভাইয়ের দায়ের কোপে ছোট ভাই খুন হয়েছেন। পুলিশ খবর পেয়েই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে আজ রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের মির্জাপুর মধ্যপাড়া..
৪০ মিনিট আগে‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতটি থানা আমাদের হাতে আছে। মানে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়ার হাতে।’ কথাগুলো দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জামশেদ হোসেন বাবু নামের এক যুবকের। সম্প্রতি জামশেদের সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নাজিম উদ্দিনের ৭ মিনিট ২ সেকেন্ডের...
১ ঘণ্টা আগে