Ajker Patrika

মেহেরপুরে নবজাতকের মৃত্যুর পর স্বজনদের মারধরের অভিযোগ চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে

মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১২: ৪২
মেহেরপুরে নবজাতকের মৃত্যুর পর স্বজনদের মারধরের অভিযোগ চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে

মেহেরপুরে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর পর প্রসূতির স্বজনদের মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রসূতির নাম রিতা খাতুন। তাঁর স্বামী রনি ইসলাম।

প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগ, তাঁদের মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসূতির স্বামী রনি ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে আমার স্ত্রী রিতা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। এরপর তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। দুই দিন ধরে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক ও নার্সরা সব সময় বলছেন রোগীর কোনো সমস্যা নেই। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাদের জানানো হয়, রিতা খাতুনের গর্ভে নবজাতকের কোনো হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমার স্ত্রীকে দ্রুত আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হাসপাতালের পাশের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’

রনি ইসলাম আরও বলেন, ‘আলট্রাসনোগ্রাফি করার পর জানা যায় নবজাতকটি মারা গেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে নার্সদের কাছে জানতে চাই, প্রসূতির খারাপ অবস্থার কথা কেন আমাদের আগে জানানো হয়নি। প্রয়োজনে আমরা রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতাম। এসব বিষয় জানতে চাওয়ায় তাঁরা আমাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মঞ্জুরুল হাসান, নার্স ও স্টাফরা আমাদের দুজনকে মারধর করে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। অন্যদিকে আমার স্ত্রীকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই অস্ত্রোপচার করে তাঁর গর্ভ থেকে মৃত নবজাতকটি বের করা হয়।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘রোগীর খারাপ অবস্থার কোনো তথ্য আমার কাছে ছিল না। এ বিষয়ে নার্সরা আমাকে কিছুই জানায়নি। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট পাওয়ার পর দেখি নবজাতক মারা গেছে।’

দুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরও রোগীর খারাপ অবস্থা না জানতে পারার দায়ভার কার জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। তবে রোগীর স্বজনদের মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সদের মারধর করেছে। শুধু পরিস্থিতি যেন খারাপ না হয়, সে জন্য তাদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল।’

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের নার্স শারমিন খাতুন বলেন, ‘হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞের নির্দেশ রয়েছে কোনো রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসককে জানাতে হবে। আমরা সেই কাজই করেছি। রোগীর অবস্থা খারাপ হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। জানার পরেই রোগীর স্বজনদের আলট্রাসনোগ্রাফি করতে বলা হয়েছিল। আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার কাজ, আমরা তা দিয়েছি। এখন কেউ মারা গেলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’

এ নিয়ে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। আমাদের কাজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেন চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার না হন, সেটি তদারক করা। আমরা সেই কাজই করেছি। বাদবাকি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আজ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত